বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমানের সম্পদের পাহাড়
প্রকাশ: ১ অক্টোবর, ২০২৫, ৩:০৭ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
অনলাইননিউজ: বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর ড্রেজিং শাখার দায়িত্বরত প্রধান প্রকৌশলী সাইফুরের ব্যাপক ঘুষ , অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের দুর্নীতিবাজ তালিকায় ঘুরে ফিরে উঠে এসেছে প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান এর নাম। অভিযোগ রয়েছে, এই কর্মকর্তা ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পে নদী খননের নামে ১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে ভোগাই ও কংস নদ খননের নামে ভয়াবহ অর্থ লোপাট, জাল সনদ ব্যবহার, একাধিক গাড়ি ও বেনামী সম্পদের মালিক হওয়া, এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রেখে অবৈধ উপায়ে হাজার কোটি টাকা হাতিয়েছেন।
জানা গেছে, তাঁর নেতৃত্বে ড্রেজিং শাখায় তৈরি হয়েছে একটি শক্তিশালী দুর্নীতিবাজ চক্র, যারা দরপত্র, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে,দুদক তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করলেও মামলা কার্যক্রম দীর্ঘসূত্রতায় ঝুলে থাকায় দৃশ্যমান হচ্ছে না কোন এক অদৃশ্য ইশারায়। অভিযোগ রয়েছে, কিছু দুর্নীতিপরায়ণ দুদক কর্মকর্তার সহায়তায় তার মামলা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা ও তদবির অব্যহত রয়েছে । ইতোপূর্বে সাইদুর ও তার স্ত্রীসহ অন্যদের সম্পদের তথ্য বিবরণী জমা পড়লেও তিন বছরেও যাচাই সম্পন্ন করতে পারেন নি কর্তৃপক্ষ।
বিআইডব্লিউটিএর অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে নামে-মাত্র খননের কাগজপত্র তৈরি করে ভুয়া বিল-ভাউচারে তোলা হয় প্রকল্পের টাকা। প্রকল্পের কাজে অংশ নেওয়া ঠিকাদারদের সঙ্গে আঁতাত করে সাইদুর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা ওই অর্থ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।
এদিকে, দীর্ঘদিন একটানা একই পদে বহাল থেকে সাইদুর রহমান সরকারি চাকরি বিধিমালার চরম লঙ্ঘন করেছেন। আবার এলজিইডি থেকে চাকরি বরখাস্তের পর তথ্য গোপন করে ২০০৩ সালে বিআইডব্লিউটিএতে চাকরি নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিআইডব্লিউটিএর একাধিক সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বার্থ চরিতার্থ করা এ দুর্নীতির সিন্ডিকেট থেকে মুক্তি চান এবং দুর্নীতিবাজ সাইদুরের অবিলম্বে অপসারণ দাবি জানিয়ে আসছেন।
সাম্প্রতিক অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত দুর্নীতিবিরোধী ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বাস্তবায়নে সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে ভুক্তভোগী কর্মচারীসহ সচেতন মহল।
সূত্র জানায়,বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের নাম এখন দুর্নীতির প্রতীক। সেখানে প্রকৌশলী সাইদুর রহমানের অনিয়ম , দুর্নীতি সিন্ডিকেট সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। তাঁর দুর্নীতির অভিযোগে কি ব্যবস্থা নেয় এটাই এখন দেখার বিষয়—অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং দুদক সত্যিকার অর্থে ব্যবস্থা গ্রহণ করে কি না সাধারণের নজর দুর্নীতি দমন কমিশনের দিকে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং বিভাগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বালাশী-বাহাদুরাবাদ নৌপথ প্রকল্পে অনিয়ম
গাইবান্ধার বালাশী ঘাট থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার নৌপথ এবং দুই প্রান্তে টার্মিনাল নির্মাণে ২০২১ সালের জুনে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। তবে, নাব্য সংকটের কারণে ফেরি চলাচল একদিনও সম্ভব হয়নি। কিছুদিন লঞ্চ চললেও তা বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, যমুনা নদীর এই স্থানে নৌপথ চালু রাখা প্রায় অসম্ভব জেনেও প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়, যা সরকারি অর্থের অপচয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ভোগাই-কংস নদী খনন প্রকল্পে দুর্নীতি
ভোগাই ও কংস নদী খনন প্রকল্পে ১৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। তবে, অভিযোগ রয়েছে যে, প্রকৃতপক্ষে কোনো খনন কার্যক্রম না করেই এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করে এবং বেশ কিছু অনিয়মের প্রমাণ পায়। তবে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্ব জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।
সাইদুর রহমানের সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন
সাইদুর রহমানের আয়কর নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনি স্বর্ণ বিক্রির ভুয়া রসিদের মাধ্যমে প্রায় ৩৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকার আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন। এছাড়া, রাজধানীর খিলগাঁও ও সিদ্ধেশ্বরীতে তার নামে একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। কুড়িগ্রাম শহরে তার রড-সিমেন্টের দোকান এবং আধুনিক ব্রিক ফিল্ড রয়েছে, যা তার আয়ের সাথে অসংগতিপূর্ণ।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি
বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগে এ ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত ও কার্যকর তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয় এবং জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপিত হয়।