বিডি ২৪ নিউজ রিপোর্ট: দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শিষের ওপর একটি শিশিরবিন্দু-কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই পঙক্তিগুলো ঠিকই মিলে যায় গণপূর্তের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কায়কোবাদের ক্ষেত্রে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বাউন্ডারীওয়াল থেকে দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার অফিসের দূরত্ব মাত্র ১৫ মিটার। অথচ এখানেই ঘুষ, দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যের পসরা খুলে বসেছেন মো. কায়কোবাদ। ফ্যাসিবাদের শাসনামলের সুবিধাভোগী ও দুর্নীতিলব্দ টাকা এখন বিনিয়োগ করছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার জন্য।
দুর্নীতির টাকার জোর এতোই বেশি যে, যেখানে নিয়ম রয়েছে কোনো কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে হলে পদোন্নতিযোগ্য একাধিক কর্মকর্তার নাম প্রস্তাব আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হয়। গণপূর্ত অধিদপ্তর সেই নিয়ম না মেনে কায়কোবাদকে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দিতে শুধুমাত্র একটি নাম প্রস্তাব করেন। অথচ তাদের ব্যাচের অপর কর্মকর্তা ইএম সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহাবুবুল হক চৌধুরীর নাম পাঠানো হয়নি। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর বিএনপি সমর্থিত কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন মাহাবুবুল হক চৌধুরী। তাঁর নাম না পাঠানোর ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে রয়েছেন ফ্যাসিস্ট আমলে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া মো. শামীম আখতার।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই-এম সার্কেল-২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কায়কোবাদ গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর নাম ভাঙ্গিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। নিয়োগ-বদলী ও পদোন্নতি ছাড়াও অনিয়ম এবং দুর্নীতির খবর যাতে ফাঁস না হয়, সেজন্য তার নেতৃত্বে একটি নিদিষ্ট সিন্ডিকেট নির্বাহী প্রকৌশলীদের নিকট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে হঠাৎই আশরাফুল আলমকে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। সিন্ডিকেটের কোটি কোটি টাকা রয়ে যায় কায়কোবাদের কাছে। এর মধ্যে একজন জুনিয়র প্রকৌশলীরও ৮০ লাখ টাকা ছিল বলে তিনি দাবি করেছেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীরা সর্বোচ্চ গ্রেড-৩ ভুক্ত কর্মকর্তা। সে হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশে কার্যকর থাকা সরকারি বেতন কাঠামো (জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫) অনুযায়ী, গ্রেড-৩ এর মূল বেতন ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত হয়। তবে, প্রস্তাবিত নতুন জাতীয় বেতন স্কেলে গ্রেড-৩ এর বেতন ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অর্থাৎ তিনি সর্বোচ্চ ৭৪ হাজার ৪শ’ টাকা পেয়ে থাকেন। যা দিয়ে বর্তমান বাজারে চলা মুশকিল হলেও আলাদীনের চেরাগের মতো এই কর্মকর্তার রয়েছে বিপুল বিত্ত-বৈভব। যা একজন কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা ব্যাক্তির সম্পদের সঙ্গে কোনভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন তার ঘরের পাশের এই দুর্নীতির বিষয়ে মোটেই আগ্রহী নয়। জানা গেছে, সেখান থেকে ছাড়পত্র আনতেও না-কি অর্ধকোটি টাকা খরচ করেছেন তিনি। প্রশ্ন থেকেই যায়, টাকার বিনিময়েই কী তিনি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হয়ে যাচ্ছেন না-কি পদটি তার কাছে বিক্রি করা হচ্ছে? ।
মো. কায়কোবাদের বিরুদ্ধে দেশে বিদেশে তার ও পরিবারের সদস্যদের নামে বেনামে বিপুল পরিমান সম্পদ অর্জনের গুঞ্জন রয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের বিলাস বহুল ফ্ল্যাটের যে দাম তা তার সারাজীবনের বেতনের চেয়ে বেশি। ঢাকার ধামরাইতে তার একটি ১০ তলা ফাউন্ডেশন ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। তার গ্রামের বাড়ী শেরপুরে রয়েছে নামে বেনামে অঢেল সম্পদ। পরিবারের ব্যবহারের জন্য রয়েছে লেটেস্ট মডেলের গাড়ী। তার সার্কেলের সকল কাজের উপর ৪ থেকে ৫ শতাংশ হারে টাকা কমিশন নিয়ে প্রাক্কলন পাসের অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য গণপূর্ত অধিদপ্তরে এই হারকে স্বাভাবিকই মনে করা হয়।
এসব বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কায়কোবাদের বক্তব্য নিতে তাঁর অফিসে যাওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ না করে কেটে দেন। অফিসের স্টাফরা বলেন, স্যার অনেক দিন ধরেই নিয়মিত অফিস করেন না। সপ্তাহে ২/৩দিন বিকেলে একবার আসেন। অল্প কিছু সময় থেকে চলে যান।