নিউজ ডেস্ক: অসহায় দরিদ্র শিক্ষার্থী ইয়াসমিন আক্তার মুক্তার চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার)। অসুস্থ মাদরাসা শিক্ষার্থী মুক্তাকে সোমবার (১৮ মে) সকালে সদর থানার ওসি (তদন্ত) সুকান্ত সাহার তত্ত্বাবধানে সদর হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) অসুস্থ মুক্তা দেখে ব্যবস্থাপত্র দেন। তাকে এক সপ্তাহ ওষুধ দেয়া হয়েছে।এ ব্যাপারে আরএমও ডাক্তার মশিউর রহমান বাবু বলেন, মুক্তা শারীরিক ভাবে দুর্বল। তার ডায়রিয়া হয়েছিল। তারপর আবার পেটে ব্যথা হয়েছে। এক সপ্তাহের ওষুধ দেয়া হয়েছে। এরপর শারীরিক অবস্থা বুঝে চিকিৎসা দেয়া হবে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে অসহায় আঞ্জু বেগমের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। হাসপাতাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া যে দুই হাজার ৫০০ টাকা চুরি হয়েছিল, আমার পক্ষ থেকে তা দিয়েছি। এখন হাসপাতালের সিসিটিভির মাধ্যমে চোর সনাক্তকরণের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া মুক্তার ওষুধসহ চিকিৎসা ব্যয় গ্রহণ করা হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদর থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন পিপিএম, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মনিরুজ্জামানসহ পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশ সুপার অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ায় খুশি হয়েছেন আঞ্জু বেগমসহ তার পরিবার। তারা পুলিশ সুপারের জন্য দোয়া করেন। গত ১৪ মে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঈদ উপহার দুই হাজার ৫০০ টাকা পেয়ে ওইদিনই অসুস্থ ছোট মেয়ে মুক্তাকে নিয়ে নড়াইল সদর হাসপাতালে যান তিনি। মুক্তার প্রচন্ড পেটে ব্যথাসহ জ্বর, বমি ও ঘন ঘন পায়খানা হওয়ায় তাকে সংক্রমক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। অসুস্থ ছোট মেয়ের সঙ্গে তার বড় মেয়েও হাসপাতালে ছিলেন। পরের দিন ১৫ মে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে অসুস্থ বোনকে নিয়ে বড় বোন হাসপাতালের বাথরুমে গেলে ছোট্ট একটি ব্যাগে রাখা প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সেই ঈদ উপহার দুই হাজার ৫০০ টাকা কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়। বাথরুম থেকে এসে টাকাগুলো আর পায়নি তারা। ওই দুই হাজার ৫০০ টাকার সঙ্গে বাড়ির আরো কিছু টাকা মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার টাকা ছিল ব্যাগটিতে। এরপর হাসপাতাল থেকে বাড়িতে চলে আসেন তারা। এ কারণে হতদরিদ্র আঞ্জু বেগমের অষ্টম শ্রেণি পড়-য়া মেয়ে ইয়াসমিন আক্তার মুক্তার চিকিৎসা সম্ভব হয়নি। টাকার অভাবে ঠিকমত ওষুধ কিনতে পারেনি। এই টাকা চুরির ঘটনায় দিশেহারা আঞ্জু বেগমের পরিবার। কর্মহীন আঞ্জু বেগমের স্বামী প্রায় ছয় মাস আগে থেকে অসুস্থ হয়ে সব কার্যক্ষমতা হারিয়েছেন। সেই থেকে সংসারে পাঁচ সদস্যের ভরপোষণ আঞ্জু বেগমের আয়ের ওপরই চলছে। বসতভিটার পাঁচ শতক জমি ছাড়া তাদের আর কিছু নেই। তাও এই জমির সব টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারেননি। আঞ্জু বেগম পরের বাড়িতে কাজসহ রান্নাবান্না করলেও করোনাভাইরাসের কারণে এসব কাজ এখন বন্ধ রয়েছে। তাই দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাদের। এ পরিস্থিতিতে টাকা চুরির ঘটনা ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়েছে।আঞ্জু বেগম আরো জানান, তার ছোট মেয়ে মুক্তা প্রায় দুই মাস ধরে পেটে ব্যাথায় ভুগছে। টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসা করাতে পারেননি। গত ১৪ মে বেশি ব্যথা উঠলে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। টাকার অভাবে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করানো সম্ভব হয়নি। এদিকে, সাংবাদিকদের মাধ্যমে অসহায় কর্মহীন আঞ্জু বেগমের টাকা চুরির ঘটনা শুনে তার মেয়ে মুক্তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার)। ঘটনাটি জানার পর গত রোববার (১৭ মে) বিকেল ৪টার দিকে ক্ষতিগ্রস্থ আঞ্জু বেগমকে ফোন দিয়ে তাৎক্ষণিক খোঁজখবর নেন তিনি। এ পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের মাধ্যমে অসহায় আঞ্জু বেগমের টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনা শুনে তার মেয়ে মুক্তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার)।প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১৮ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে নড়াইল সদরের হবখালী ইউনিয়নের কোমখালী গ্রাম থেকে অসুস্থ এক রোগিকে পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সে সদর হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করেন পুলিশ সুপার। এরপর ৬ মে রাত ৮টার দিকে নড়াইল সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের উত্তরখলিশাখালী গ্রামের রিপন বিশ্বাসের মোবাইল ফোন পেয়ে পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে প্রসববেদনায় কাতর তার (রিপন) স্ত্রী অনিতাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। প্রায় এক বছর আগে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুচিয়াবাড়ি গ্রামে সন্তান কর্তৃক বাঁশবাগানে ফেলে দেয়া বয়োবৃদ্ধ এক মাকে হাসপাতালে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার)। এ ছাড়া আরো অনেক মানবিক কাজসহ নড়াইলের বিভিন্ন অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশংসিত হয়েছেন তিনি