শেখ বদরুল আলম,বালাগঞ্জ,(সিলেট) প্রতিনিধি :
বিখ্যাত দার্শনিক হেলেন কিলার বলেছেন, “পৃথিবীর সুন্দরতম জিনিসগুলো হাতে ছোঁয়া যায় না, চোখে দেখা যায় না, সেগুলো একমাত্র হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয়- ভালবাসা, জীবে দয়া আর আন্তরিকতা”। সে রকম একটি সুন্দরতম কাজ কিংবা সংগঠন এর নাম “এন আর ডি ফাউন্ডেশন “। যা হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয়। ২০১৬ ইং সালের ২১শে জানুয়ারি দারিদ্র পিড়িত মানুষের কষ্ট দেখে সিলেট জেলার বিভিন্ন এলাকায় নাজিরুল ইসলাম খান এন আর ডি ফাউন্ডেশন নামে একটি মহৎ সংগঠন চালু করেন।
একটি ফেসবুক নির্ভর অনলাইন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ” এন আর ডি ” নাম হলেও মূলত এটি পরিণত হয়েছে সামাজিক বন্ধনে। যারা দুঃখী মানুষের পাশে নিজেরাই হাজির হন সহায়তার দাবিতে। একটি সুন্দর সামাজিক সংগঠন দুর্বলকে শক্তি যোগায়, দিশেহারাকে পথ দেখায়, অন্ধকারে জ্বালায় আলোর মশাল। হতাশা, ব্যর্থতা, গানির তিক্ত অনুভূতিগুলো যখন ঘিরে ধরে তখন ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সম্বল হয় সামাজিক সংগঠনের একটু আশা, একটুখানি সম্ভাবনার হাতছানি।
জীবনের কঠিন সময় গুলোতে অসহায় মানুষের মনোবল ধরে রাখতে হৃদয়ে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছে দুঃখী এন আর ডি’র এই সংগঠন। এমনটি প্রত্যাশা এখন বিভিন্ন উপজেলার হাজার হাজার অসহায় নারী পুরুষ গণমানুষের। কেননা পৃথিবী’র ২০ ভাগ অর্থ ও সম্পদ যদি মুষ্টিময় কিছু ব্যক্তির কাছে না থেকে দরিদ্র লোকের কাছে থাকতো, তবে পৃথিবীর কেউই কষ্টে থাকতো না। উন্নয়নশীল দেশ আমাদের বাংলাদেশ।
এগিয়ে যাচ্ছে তারপরেও বাংলাদেশে এখনো অনেক মানুষ দারিদ্রতার কষাঘাতে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। বেসরকারি জরিপে এখনো ৩০লাখ শিশু ফুটপাতে ঘুমায়। তাদের পাশে দুঃখী এন আর ডি’র হাত বাড়ানো। হতে পারে সীমিত সম্পদ দিয়ে সরকার একার পক্ষে সম্ভব নয়। দেশের সকল মানুষের অভাব পূরণ করা। প্রতিটি মানুষের বিবেক যদি দুঃখী এন আর ডি’র ও তার সংগঠনের কর্মীদের মতো কেঁদে ওঠে, তবে সৃষ্টি হবে আরো সেবামূলক নানা সমাজকল্যাণ সংগঠন। তাদের এ কার্যক্রমটি সিলেটের বিশ্বনাথ শ্রীধরপুর হতে মূলত শুরু হলেও বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে দ্রুত বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
দুঃখী নাজিরুলের কর্মপ্রেরণায় আজ সিলেট জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে দৃঢ় প্রত্যয়ী তার দল ও সংগঠন। যাদের এ কার্যক্রমে ইতিমধ্যে বেশ প্রশংসনীয় ভুমিকা রেখেছে সিলেট। যেমন তিন উপজিলার হতদরিদ্রদের চিকিৎসা খরচ সিলেটে জন্ম নেওয়া যমজ শিশুর চিকিৎসার জন্য ফান্ডের ব্যবস্থা, মেধাবী ছাত্রছাত্রীর শিক্ষা সামগ্রী বিবিধ খরচ বহন, পানির সমস্যা সমাধানে গরিবদের মাঝে টিউবওয়েল বিতরণ,ছিন্নমূল শিশুদের বস্ত্র বিতরণ, রমজানে মাসে ইফতার সামগ্রি বিতরণ, অসহায় নির্যাতিত মা বোনদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা, শীর্তাতদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, আগুনে পোড়া শিশুর পাশে দাড়িয়ে আর্থিক সহায়তা, কিডনি রোগীর চিকিৎসা প্রদানে সহায়তা।
এছাড়াও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, (বাল্য বিবাহ বন্ধকরণ, জঙ্গিবাদ বিরোধী সেমিনার) পাহাড়ি এলাকার শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা উপজিলার বিভিন্ন স্থানে ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প করা সহ জাতীয় দুর্যোগ উত্তর বঙ্গে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ রোহিঙ্গাদের মাঝে কিছু ত্রাণ বিতরণ, নানা সামাজিক কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন সংগঠনের মাধ্যমে একঝাঁক মেধাবী তরুণ ও মধ্যবয়সী স্বেচ্ছাসেবক। যারা সমাজের নানা শ্রেণীর মানুষের বিবেক জাগ্রত করতে অসামান্য এই কাজ করে চলেছেন। তাদের এই উদ্যোগে উৎসাহিত হয়ে পর পর সৃষ্টি হয় আরো অগণিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
তবে তাদের এ সেবা প্রদানে রয়েছে নানা সমস্যা ও প্রতিকূলতা। তারপরেও তারা এগিয়ে যেতে বন্ধ পরিকর। যদিও অর্থের অভাবে অনেক সময় ভাল কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির। তাদের ভরসা সমাজের ভালো মানুষ গুলো হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে বিদেশে থাকা অবস্থায় তার এই অনুপ্রেরণা। এমনকি তাদের প্রত্যাশা প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে আরো এগিয়ে যেতে পারবে সামনে। হাসি ফোঁটাতে পারবে অগণিত অসহায় মানুষের মুখে। বিত্তবান শ্রেণীর লোকদেরও এগিয়ে আসা উচিত চারপাশে থাকা অসহায় মানুষের চোখের পানি মুছতে। জগতে এটাই ধর্ম , যে ধর্ম মানুষের সেবার কথা বলেনি সে ধর্ম কখনো টিকেনি ।
মনীষীরা বলেছেন, “তুমি যখন সবাইকে ভালবাসতে শিখবে, সবার কল্যাণে কাজ করে যাবে- জীবনের প্রান্তিলগ্নে গিয়ে দেখবে মানুষের ভালবাসায় তুমি একদম আকণ্ঠ ডুবে আছো! বিশ্বাস করো এর চেয়ে পরিতৃপ্তি জীবনে আর কিছুতে হতে পারে না!”। রাষ্ট্র যদিও বৃহত্তম মানব সংগঠন। একান্ত মানবিক প্রয়োজনে, সামাজিক সংকটে মানুষ সাহায্য প্রত্যাশা করে। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায় সমাজহিতৌষী, সমাজ, সংগঠন ও রাষ্ট্র।
তেমনি এক সমাজ সংগঠন “এন আর ডি ফাউন্ডেশন ”। যাদের সমাজহিতকর কাজের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশনে দেখানো হয়।অনুষ্ঠানে তাদের কর্মকান্ড নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। সংগঠন থেকে মানবিক কাজের অবদানের জন্য সম্মাননা স্মারক পদকে ভূষিত হন। এমনকি সিলেটের শীর্ষ স্থানীয় সংবাদপত্র পত্রিকা যাকে নিয়ে সংবাদ প্রচার করে। এছাড়াও সিলেটের নানা স্থানীয় পত্রিকায় তাদের সংগঠনের সমাজকর্ম নিয়ে আলোচনা করেন।
সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান : নাজিরুল ইসলাম খান প্রতিবেদককে বলেন, “দারিদ্রের কষাঘাতের শিকার হয়ে সেদিন স্কুলের একজন ভাল ছাত্র হয়ে ও বেশী পড়া লেখা করা সম্ভব হয়নি আমার। তারপরেও অসহায় মানুষদের পাশে সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে আমার এই ক্ষুদ্র চেষ্টা। দিন-রাত অবিরাম পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তার সহযোগীরা। তাদের মূল লক্ষ্য অসহায় গরিবদের পাশে দাড়ানো। দরিদ্র মানুষ গুলোর কষ্টে দেখে স্বল্প পরিসরে হলেও তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘবে সহায়তা করে চলেছে তাদের এই সংগঠন।