আবু হানিফ, বাগেরহাট অফিসঃ
বাংলাদেশের সুন্দরবন যা বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন। এই বনে রয়েছে নানান ধরণের পশু, পাখি,জীব-জন্ত। সুন্দরবনের করমজল একটি পর্যটন এলাকা। বছরের প্রতিদিনই থাকে দর্শনার্থীদের ভীড়। তবে শীতকালে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশিই থাকে। সুন্দরবনের করমজলে ২০১৪সালে কচ্ছপ প্রজনন শুরু হয়।
পুরো বিশ্বে প্রায় তিনশত প্র্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে। আর এই প্রজাতির কচ্ছপ গুলোকে ভাগ করা হয়ে থাকে তিন ভাগে প্রথম টরটইস, টারটেল, ট্রফেন। তিনশত প্রজাতির ক”ছপের ভিতর আমাদের বাংলাদেশে রয়েছে ২৬ প্রজাতির। এদের ভিতর ২১ প্রজাতির ক”ছপ ও ৫ প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপ পাওয়া যায়।
সুন্দরবনের করমজলে রয়েছে বাটাগুর বাসকা। যা ঈষৎ লবনযুক্ত পানির এলাকায় প্রচুর ছিল। আর এই প্রজাতির কচ্ছপ মাংস সুস্বাধু খাদ্য হওয়ায় হিন্দু ও খ্রিষ্ঠানরা খেয়ে থাকে। অনেক হিন্দু জমিদার এই কচ্ছপ পুকুরে চাষ করতো এবং বা’চ্চা বড় করে জবাই করে খেত। হঠাৎ ২০০০সাল থেকে এদের আর পাওয়া যাচ্ছিলো না।
তখন ধরে নেওয়া হয়েছিল এই প্রজাতিটি সম্ভবত পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তারপর ২০১০ সাল হতে ময়মনসিংহ এর ভালুকায় প্রজননের কাজ শুরু করে। অনেক বা’চ্চা হলেও এদের সুস্থতা ও সারভাইবে সমস্যা হয়। তখন ২০১৪ সাল হতে ঈষৎ লবণযুক্ত পানির এলাকা সুন্দরবনের করমজলে নতুন করে প্রজনন কার্যক্রম চালু করা হয়।
এখানে ২০১৭ সালে দুইটি কচ্ছপ এর যথাক্রমে ৩১ টি ও ৩২ টি ডিম পাড়ে এবং তা থেকে ২৮ টি ও ২৯ টি বা’চ্চা পাওয়া যায়। এছাড়া ২০১৮ সালে অন্য দুইটি কচ্ছপ যথাক্রমে ২৬টি ও ২০টি ডিম দেয়, এ থেকে ৫টি ও ১৬ টি বা’চ্চা পাওয়া যায় এবং ২০১৯ সালে ৩২ টি ডিম থেকে ৩২টি বা’চ্চা পাওয়া যায়।
এই প্রজাতিটি সাধারণত ১৬/১৮ বছর বয়সে পূর্ণবয়স্ক হয়। প্রজনন মৌসুমে পুরুষগুলোর গলার দিকে লালচে রঙ ধারণ করে। স্ত্রীগুলো পুরুষগুলোর চেয়ে বেশ বড় হয়। কখনো কখনো স্ত্রী ডিম্বানু পরিপক্ক বা জাইগোট না ঘটিলে স্ত্রী গুলো শুক্রানু রিজার্ভ রাখতে পারে। ক’চ্ছপ সাধারণত বালির ভিতর গর্ত করে ডিম পারে। ১৫ থেকে ৪০ টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে।
বাটাগুর বাসকার ডিম থেকে ৬০-৭০ দিনে বা’চ্চা ফুটে। তাপমাত্রা ভেদে সময় লাগে। সঠিক ভাবে ইনকিউবেশন করলে ১০০% বা’চ্চা পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন করমজলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবীর। করমজলে যান্ত্রিক ইনকিউবেটর না থাকলেও ডিম ফুটানোর সময় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
কোন তাপমাত্রায় কত পারসেন্ট পুরুষ বা মহিলা হবে তা নিয়ে চলছে গবেষণা। তিনি আরো বলেন, ২০১৮ সালে ডিম পাড়ার সময় রাত্রে নিজের চোখে দেখেছিলাম ডিম পাড়ার কলাকৌশল। অত্যাস্ত রিস্ক কিন্ত আগ্রহ জনক। বাটাগুর বাসকা সাধারণত ১৫ থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। এদের স্ত্রী পুরুষ নির্ধারণ সহজে করা যায়না।
তবে অনুমান করা হয় স্ত্রী গুলোর চেয়ে পুরুষ গুলোর লেজ একটি বড় হয়।
করমজলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবীর আরো জানান, সুন্দরবনে এক সময় প্রচুর বাটাগুর বাসকা ছিল। কিন্ত বর্তমানে আর কোথাও দেখা যায়না। কোথাও আছে কিনা তা খোজার জন্য ২০১৭ সালে ২টি, ২০১৮ সালে ৫টি এবং ২০১৯ সালে ৫টি পুরুষ ক”ছপ স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার এ্যান্টিনা সেট করে সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়।
প্রজনন মৌসুমে তাদের শব্দ সংকেতের মাধ্যমে প্রজননের কাজ অন্য স্ত্রী থাকলেও একত্রিত হওয়ার কথা। কিন্ত আজ অবদি কোন পেয়ার পাওয়া যায়নি। তাতে ধারণা করা হ’চ্ছে সুন্দরবনে বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ আর নেই। তাছাড়া তাদের চলাফেরা ও গতি প্রকৃতি কচ্ছপ দ্বারা জানা যাচ্ছে।
প্রতিটি কচ্ছপ কোথায় যাচ্ছে তা প্রতি ১৫ মিনিট পর পর জিপিএস লোকেশনসহ পাওয়া যাচ্ছে। আর এ তথ্য দিয়ে ভবিষ্যতে এই প্রজাতি সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানা যাবে। এই প্রজাতি সম্পর্কে পূর্বে বড় কোন তথ্য নেই।
করমজলে প্রকৃত পক্ষে এই প্রজাতির তাপমাত্রার মাধ্যমে স্ত্রী পুরুষের সংখ্যার পরিমাণ, বয়স, রোগ-বালাই, চিকিৎসা, খাদ্য প্রবৃদ্ধি চলাফেরা ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা কাজ চলছে। বর্তমানে করমজলে সকল বয়সী মিলিয়ে ৩০২ টি বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে।