বাগেরহাটের শরণখোলায় পল্লী বিদ্যুতের তালবাহানা ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট এখন চরম পর্যায়ে। প্রতিদিন ২০/২৫ বার বিদ্যুতের আসা যাওয়ার ফলে বোঝা মুশকিল হযেছে বিদ্যুৎ যায় নাকি আসে! যদিও আসে তা সীমিত সময়ের জন্য। শরণখোলার প্রায় ২৪ হাজার গ্রাহককে এক প্রকার জিম্মি করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মত রক্ত চুষে নিচ্ছে পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
করোনার ক্লান্তি লগ্নে পল্লী বিদ্যুতের তালবাহানায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ছোটবড় কলকারখানাগুলো এখন বন্ধের মুখে। এছাড়া প্রচন্ড তাপদাহে শিশু, বয়োবৃদ্ধসহ মানুষের কষ্টের সীমা নেই। করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এ যেন মারার উপর খাড়ার ঘাঁ। আকাশে মেঘ দেখলেই পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ এক প্রকার ভয় পেয়ে বৈদ্যতিক সংযোগ বন্ধ করে দেয়।
পল্লী বিদ্যুতের তাঁর ছিড়তে কোন ঝড় বাতাসের প্রয়োজন হয়না। বৃষ্টির আভাস পেলেই খুঁটি ভেঙ্গে পড়ে এমন অজুহাত পল্লী বিদ্যুতের নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। তাদের ভেলকিবাজিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রিক সকল ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এছাড়া বিগত তিন মাসে ভৌতিক বিলের সম্পূর্ন টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে গ্রাহকদের।
এমনকি মিটার রিডিং এর সাথে বিলের ইউনিটের মিল না থাকার কারণ জানতে চাওয়ায় গ্রাহকদের সাথে অশালীন ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে শরণখোলা অফিসের কর্তা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিদের কাছে অহেতুক বিদুৎ আসা-যাওয়ার কারণ, লোডশেডিং এবং গ্রাহক হয়রানী সম্পর্কে জানতে চাইলে এক অপরকে দোষারোপ করে বিয়টি এড়িয়ে যান।
পল্লী বিদুতের ভৌতিকতা থেকে গ্রাহকরা পরিত্রানের উপায় খুঁজছে। বর্তমান পল্লী বিদ্যুতের চেয়ে পূর্বের (পিডিবি)র বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা অনেক ভাল ছিল বলে মন্তব্য করেন অনেক গ্রাহক। শরণখোলার জনগন পিরোজপুর পল্লী বিদুতের কর্মকর্তাদের দাহিত্বহীনতা ও দুর্ব্যবহারে অবসান চেয়ে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
পল্লী বিদুতের এমন আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উপজেলার বেশ কিছু জামে মসজিদের ইমাম সহ মুসল্লিদের অভিযোগ প্রায়ই বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় প্রতি ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হওয়া ছাড়াও ঘামে জামাকাপড় ভিজে একাকার হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে রায়েন্দা সদর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জালাল আহমেদ রুমি জানান, পল্লী বিদ্যুতের তামাশায় শরণখোলাবাসী অতিষ্ট এবং পল্লী বিদ্যুতের সাথে জড়িত কিছু দালাল চক্র সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে।
রায়েন্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার তালবাহানা এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারের চেয়েও অতিরিক্ত বিল এ সকল বিষয় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ছকে সাজানো মাত্র। জনগনকে কষ্ট দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের এ ধরনের প্রহসন সহ্য করা হবেনা।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বমানবতার মমতাময়ী নারী ও মাননীয় প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বিদ্যুৎ একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমার মনে হয় সরকারের এই উন্নয়ন ও সাফল্যকে বাঁধাগ্রস্ত করতে পল্লী বিদ্যুতের ভিতরের কেউ কেউ এ ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম খোকন জানান, শরণখোলার বিদ্যুৎ নিয়ে পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ যে ধরনের তালবাহানা করছে তা অসহনীয়। মনে হচ্ছে পল্লী বিদ্যুতের কর্তাদের মধ্যে সরকার বিরোধী একটি চক্র সক্রীয়ভাবে কাজ করছে। নতুন সংযোগ দেয়া, বৈদ্যতিক খুঁটি স্থাপন সহ সকল কাজে দালালদের দৌরত্ত¡ বন্ধ করার জন্য সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বিদ্যুতের এধরনের ভেলকিবাজি সম্পর্কে জানতে চাইলে পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শরণখোলা জোনাল অফিসের এ.জি.এম আশিক হাসান সুমন বলেন, বিষয়টি আমাদের নয় আমতলী পাওয়ার হাউজের গাফিলতিতে একটু সমস্যা হচ্ছে।
মোড়েলগঞ্জ অফিসের ডি.জি.এম দিলীপ কুমার বাইন বলেন, বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভারপ্রাপ্ত জি.এম স্বরুপকাঠি জোনের ডিজিএম মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি খোঁজখবর নিয়ে অতি শিগ্রই সমাধান করার ব্যবস্থা করব।
এব্যাপারে শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহীন বলেন, বিদ্যুতের এ ধরনের আসা-যাওয়া আমার চাকরী জীবনে অন্য কোন উপজেলায় দেখিনি। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কর্মীদের আরো দায়িত্বশীল হওয়া উচিৎ।