বন্য প্রাণী শিকার নিষিদ্ধ হলেও আইন অমান্য করে হরিণ শিকার করছে একটি চক্র। এতে সুন্দরবনে দিন দিন কমে যাচ্ছে হরিণের সংখ্যা। সুন্দরবনে শিকারিদের টার্গেট এখন হরিণ। একের পর এক হরিণ ধরার পর বনে জবাই করে মাংস বেচার জন্য লোকালয়ে নিয়ে আসছে। স্থানীয়রা মনে করছে, করোনাকালে এটা বেড়েছে।
নাম প্রকাশে অনি”ছুক সুন্দরবনসংলগ্ন বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী জানায়, আগে একসময় সুন্দরবনে অহরহ হরিণ শিকার চলত। বন বিভাগ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্কার তৎপরতায় মাঝে হরিণ শিকার অনেক কম ছিল। কিন্ত কয়েক মাস ধরে কিছু মানুষের তৎপরতা বেড়েছে। শিকারিরা সুন্দরবন থেকে হরিণ শিকার করে মাংস এনে লোকালয়ে কেজি দরে বিক্রি করে।
কোনো কোনো শিকারির তৎপরতা মাঝে বন্ধ থাকলেও করোনার এই সময়কে তারা সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে।
বন বিভাগের তথ্য মতে, ২০১৯ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫৮ কেজি মাংস, হরিণের তিনটি মাথা এবং চারটি চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া শিকারিদের ২৮টি নৌকা, ছয়টি ট্রলার, ১০ হাজার ফুট ফাঁদ জব্ধ করা হয়। এ সময় ৪০ জন হরিণ শিকারিকে আটক করা হয়। এসব ঘটনায় ৩৭টি মামলা করা হয়েছে। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের তথ্য মতে, এক বছরে তাদের আওতাধীন এলাকা থেকে ২৩ জন হরিণ শিকারিকে আটক করা হয়। পলাতক রয়েছে ৫৬ জন।
এ সময় ১২৯ কেজি হরিণের মাংস, একটি মাথা, দুটি চামড়া, ১৫টি নৌকা, ছয়টি ট্রলার, সাড়ে ৯ হাজার ফুট ফাঁদ, দুই বস্তা নাইলনের রশি, জাল তিন হাজার ফুট এবং ফাঁদ থেকে জীবিত অবস্থায় ২২টি হরিণ উদ্ধার করা হয়।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের তথ্য মতে, এক বছরে তাদের আওতাধীন এলাকা থেকে ১৭ জন হরিণ শিকারিকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা করা হয়। এ সময় ২৯ কেজি হরিণের মাংস, প্রায় এক হাজার ৩০০ ফুট ফাঁদ, ১৩টি নৌকা এবং দুটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ মে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে টিয়ার চর এলাকায় শিকারিদের ফাঁদ থেকে বন বিভাগ জীবিত অবস্থায় ২২টি হরিণ উদ্ধার করে। পরে ওই সব হরিণ সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়। ২৩ ও ২৪ এপ্রিল পিরোজপুরে মঠবাড়িয়া উপজেলা থেকে সুন্দরবনে দুটি বার্কিং হরিণ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ২৮ মে বাগেরহাটের শরণখোলায় সুন্দরবনসংলগ্ন গ্রাম থেকে আরো একটি বার্কিং হরিণ উদ্ধার করা হয়।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মঈনুদ্দিন খান জানান, এলাকার বাইরে থাকা বেশ কিছু মানুষ করোনাভাইরাসের কারণে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় তাদের বাড়িতে এসেছে। এখানে এসে কাজ না থাকার কারণে সুযোগ নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করছে। এসব মানুষের কারণে সুন্দরবনে চোরা তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বনে এই মুহূর্তে সব ধরনের পাস পারমিট দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এর পরও চোরাইভাবে কিছু মানুষ বনে ঢুকে হরিণ শিকার করছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, হরিণ শিকারের সঙ্গে জড়িত যেসব আসামিকে আটক করা হচ্ছে তাদের বেশির ভাগের বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল, শরণখোলা, মোংলা, মোরেলগঞ্জ, খুলনার দাকোপ, পিরোজপুরের পাথরঘাটা এবং মঠবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।
সুন্দরবন পশ্চিম ডিএফও বশিরুল আল মামুন জানান, শিকারিদের ধরতে সুন্দরবনে স্মার্ট প্যাট্রল এবং বন বিভাগের টহল বাড়ানো হয়েছে। শিকারিরা সুন্দরবনে যাতে প্রবেশ করতে না পারে এ জন্য বন বিভাগ কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করছে।