ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চলমান বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে সহিংসতায় দুইজন নিহত হয়েছেন।
আট ধাপের ভোটের মধ্যে মঙ্গলবার তৃতীয় ধাপে ৩১টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়েছে। এই ভোট ঘিরে বিজেপি-তৃণমূলের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ওই দুইজন নিহত হন।
এসব ঘটনার জন্য পরস্পরকে দুষছে বিজেপি ও তৃণমূল। তবে এ দিন ভোটকেন্দ্রের উত্তাপ ছাপিয়ে সবার নজর কেড়েছে পরস্পরের বিরুদ্ধে মোদি ও মমতার তীর।
মুসলিম ভোটও দিদির হাতছাড়া হয়েছে বলে করা প্রধানমন্দ্রী নরেন্দ্র মোদির মন্তব্যের পাল্টা আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছেন, আমরাই জিতছি। মোদি এসে সুর করে ‘দিদি, ও দিদি’ বলে ব্যঙ্গ করছেন। মিথ্যা বলায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও ছাড়িয়ে গেছেন মোদি। পরে আরেক কাঠি ওপরে সুর চড়িয়ে মোদি বলেছেন, এবার হারলে তৃণমূল নামের দলটিও বিলুপ্ত হবে।
পশ্চিমবঙ্গে পৃথক নির্বাচনী সভায় পরস্পরকে এভাবে তুলাধুনা করেন তারা।
মঙ্গলবার হাওড়ার সাতটি, হুগলির আটটি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ১৬টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ভোট গ্রহণের হার প্রায় ৮০ শতাংশ।
তৃতীয় ধাপের ভোটে সংঘর্ষে এক তৃণমূল নেতা ও বিজেপির এক কর্মীর মা নিহত হয়েছেন বলে সংশ্নিষ্ট দল দুটি অভিযোগ করেছে। বেশ কয়েকজন প্রার্থী হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আরামবাগে তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল খাঁর ওপর বিজেপি হামলা চালিয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছে দলটি। বাঁশের আঘাতে তার মাথা ফেটে গেছে। উলুবেড়িয়া দক্ষিণ আসনে বিজেপি প্রার্থী অভিনেত্রী পাপিয়া অধিকারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তারকেশ্বরে হামলার শিকার হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী স্বপন দাশগুপ্তর পোলিং এজেন্ট।
হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি ও তৃণমূল। এ নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট তেমন সাড়া তুলতে পারেনি।
নন্দীগ্রামসহ দ্বিতীয় ধাপের ৩০ আসনে ভোটের দিনও মোদি পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী জনসভা করেছিলেন। তা নিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছিলেন মমতা। এবার তৃতীয় ধাপের ভোটের দিনও মোদি প্রচারে এলেন। কোচবিহারের রাসমেলার মাঠ ও হাওড়ার ডুমুরজলায় দুটি সভা করেন তিনি।
মঙ্গলবার ছিল বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবস। দলটির আদর্শিক গুরু ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মভূমি পশ্চিমবঙ্গে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবসে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মভূমি বাংলায় আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এ সময় তিনি বলেন, দিদি মুসলিমদের এক হয়ে ভোট দিতে বলছেন। আমি যদি হিন্দুদের একজোট হয়ে ভোট দিতে বলতাম, তাহলে কেমন হতো? দিদি, ও দিদি, এবার মুসলিম ভোটও আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই। ভোটে বিজেপির এমন ঢেউ উঠেছে, সেই ঢেউ দিদি ও তার গুন্ডা বাহিনীকে এক পাশে ঢেলে ফেলে দিয়েছে। দিদির খেলা এবার শেষ। বিজেপিকে জিতিয়ে দিচ্ছে বাংলার মানুষ।
আলিপুরদুয়ারে মোদির বক্তব্যের সমালোচনা করে মমতা বলেন, বিজেপির গুন্ডারা বাইরে থেকে এসে সংঘর্ষ বাধাচ্ছে। গুন্ডামি করে ভোটে জেতা যায় না। ৩১টি আসনে ভোট। সকাল থেকে খবর পাচ্ছি বিজেপি হেরেছে।
মমতা আরও বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা বলছেন। সাধারণ মানুষ কী করবে? আমাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করছেন। মাওবাদী হামলায় ২১ জন জওয়ান মারা গেলে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। আর ভোটের মাঠে কোটি কোটি টাকা ওড়াচ্ছে। মিথ্যা বলায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও ছাড়িয়ে গেছেন মোদি।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হরহামেশা মিথ্যা বলা ও ভুল তথ্য ছড়ানোর বহু প্রমাণ রয়েছে।