তামান্না হত দরিদ্র হলেও মেধাবী শিক্ষার্থী।স্কুল জীবন থেকে ভালো রেজাল্ট করে এসেছেন। গত ৪ এপ্রিল বিকেলে ঘোষণা করা হয় এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল। এতে তামান্না টেস্ট স্কোর ৭১.৫, মেরিট স্কোর ২৭১.৫ পেয়ে মেধাতালিকায় ২২৬৭ নম্বরে স্থান পান। তামান্না রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এর আগে ২ এপ্রিল ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
কিন্তু এমন সুখবরে পরিবারের বাঁধভাঙা আনন্দ থাকলেও এক অনিশ্চয়তার মাঝে দিন কাটছে তামান্নার পরিবারের। মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েও চরম দারিদ্র্য তার স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তামান্নার দরিদ্র বাবার কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
বাড়ির ভিটেটুকু ছাড়া চাষাবাদ করার মতো কোনো জমিজমা নেই। সংসার চালাতে হিমশিম খান। তাই বিভিন্ন হাটবাজারে ভ্যানগাড়িতে করে কাপড় ফেরি করেন তারা মিয়া। তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চললেও সঞ্চয় বলতে কিছু নেই। এমন কষ্টের সংসারে হঠাৎ সুখবর এনে দিলেন তার মেয়ে তারজিনা তামান্না আক্তার।
তামান্না কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম বেলদহ গ্রামে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন। তামান্না উপজেলার জয়মনিরহাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ ও ভূরুঙ্গামারী মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ (গোল্ডেন) পান।
আরো পড়ুন >>>একটি কৃত্রিম পায়ের জন্যই যত আকূতি মেধাবী ছাত্র অভিজিতের
জানা গেছে, দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া দুই বোনের মধ্যে বড় তামান্না। দারিদ্র্যকে জয় করে তামান্না মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় পরিবারে পাশাপাশি গ্রামবাসীর মাঝে যেমন আনন্দের বন্যা বইছে, অন্যদিকে ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় তাদের মধ্যেও হতাশা বিরাজ করছে।
মেয়ের সফলতায় খুশি বাবা তারা মিয়া অক্ষমতার কথা জানিয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে আরডিআরএস নামের একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছি। মেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ায় দুই বছরের জন্য এই এনজিও ২৪ হাজার টাকা বৃত্তি প্রদান করে। বৃত্তির টাকা খরচ না করে সেই টাকা দিয়ে মেয়েকে রেটিনা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করাই।
এদিকে তামান্নার অনলাইনে ক্লাস করার জন্য মালয়েশিয়াপ্রবাসী তার বাবার এক পরিচিত ব্যক্তি একটি মোবাইল ফোন কিনে দেন।
কথা হয় তামান্নার সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। কিন্তু ভর্তি হতে পারব কি না, এই ভেবে দুশ্চিন্তায় আছি। আমার বাবা-মাও খুব চিন্তায় আছেন। কারণ, ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় আমার স্থান হলেও অভাব-অনটনের সংসার থেকে মেডিকেলে ভর্তি হওয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ব্যাপারে ভূরুঙ্গামারী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ খালেদুজ্জামান বলেন, মেয়েটি খুবই মেধাবী। কলেজে পড়ার সময় আমরা তাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছি। এমন এক প্রতিভা যেন দারিদ্র্যের কষাঘাতে হারিয়ে না যায়, সে জন্য তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান