কুড়িগ্রাম জেলার প্রায় পঁচিশ লাখ মানুষের উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির একমাত্র ভরসা স্থল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা প্রদান যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার ২০ লাখ মানুষ। রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ জনবল সংকট চরমে। ১০০ শয্যার জনবলের ৭০ শতাংশ দিয়েই চলছে ২৫০ শয্যার কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল।
হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৪০০ রোগী ভর্তি থাকে। ওয়ার্ডের মেঝে এবং বারান্দায় বিছানা দিয়েও রোগীর চাপ সামলাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়। চিকিৎসা নিতে এসে দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা পরিবেশে রোগী ও স্বজনদের আরও অসুস্থ্য হতে হয়। আউটডোরে প্রতিদিনের রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৫০০। অথচ এখানে ১০০ শয্যার অনুমোদিত জনবলের মধ্যে মোট চিকিৎসকের ৪২ শতাংশ পদই শুন্য রয়েছে। এছাড়াও ২য় শ্রেণির ৯ শতাংশ, ৩য় শ্রেণির ৭১ শতাংশ এবং ৪র্থ শ্রেণির ৪৬ শতাংশ পদ শুন্য রয়েছে। তারমধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্টের পদ শুন্য রয়েছে ৯০ শতাংশ, জুনিয়র কনসালটেন্ট ৪২ শতাংশ, স্টাফ নার্স ৫৫ শতাংশ এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও মেডিকেল টেকনিশিয়ান ৮৯ শতাংশ পদ শুন্য আছে। অর্থাৎ সিনিয়র কনসালটেন্ট ১০ টি পদের মধ্যে ৯ টি পদই শুন্য রয়েছে। এনাসথেসিয়া ব্যতীত মেডিসিন, সার্জারী, গাইনী, শিশু, ইএনটি, চর্ম-যৌন, অর্থো-সার্জারী, চক্ষু এবং কার্ডিওলোজি বিভাগের কোন সিনিয়র কনসালটেন্ট নেই। আবার জুনিয়র কনসালটেন্ট ১২টি পদের মধ্যে ৫টি, স্টাফ নার্স ১১ টি পদের ৬ টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট(ল্যাব), ফিজিওথেরাপি, রেডিওগ্রাফী, ডেন্টাল এবং ইপিআই মিলে ১২ টি পদের ৯ টি, মেডিকেল টেকনিশিয়ান(ইসিজি), এনেসথেসিয়া, ডায়ালাইসিস, বায়োমেডিকেল এবং ইকোসহ মোট ১৫ টি পদের মধ্যে ১৫ টি, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৭ টির মধ্যে ৬ টি পদ শুন্য রয়েছে।
নেই আধুনিক মানের যন্ত্রপাতি ও আইসিইউ। কোন কোন যন্ত্রপাতি থাকলেও চিকিৎসক বা টেকনিশিয়ানের অভাবে সেগুলো অকার্যকর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে এমনটিই পাওয়া গেছে।
চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ শহীদুল্লাহ লিঙ্কন বলেন, চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা প্রদানে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। প্রায় এক বছর হলো জনবলের চাহিদা পত্র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকসহ জনবল বাড়ানোর কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ৫০ শয্যার কুড়িগ্রাম হাসপাতাল ১৯৯৯ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পর হাসপাতালটি ২০১৬ সালে ২৫০ শয্যার অনুমোদন পায়।
প্রায় ৫/৬ বছর যাবৎ ২৫০ শয্যার মেডিসিন ও ডাইটসহ অন্যান্য সুবিধা পেলেও শুরু থেকেই জনবল সংকটে রয়েছে হাসপাতালটি। ফলে জেলার প্রায় ২৫ লাখ মানুষ কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন।
প্রসূতী ওয়ার্ডে সন্তান ডেলিভারী সন্তোষজনকঃ কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতী ওয়াীডে গর্ভবতী মায়েদের সন্তান ডেলিভারী করানোর সংখ্যা কিছুটা সন্তোষজনক বলে জানা গেছে। জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এগারো মাসে এখানে মোট ডেলিভারীর সংখ্যা ১১১২টি। তারমধ্যে নরমাল ডেলিভারি করানো হয়েছে ৮৫১টি এবং সিজারিয়ান ডেলিভারি ২৬১টি।
শক্তিশালী সিন্ডিকেট ও টেন্ডার বাণিজ্যের অভিযোগঃ
দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে হাসপাতালের যে কোন টেন্ডার পছন্দের ঠিকাদারকে পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ অনেক পুরোনো বলে জানা গেছে। চলতি অর্থবছরেও (২০২২-২০২৩) পছন্দের ঠিকাদারকে ‘কাজ দিতে’ অভিনব ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ শর্ত দিয়ে এমএসআর (মেডিসিন ও মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ক্রয়) দরপত্র আহ্বানের অভিযোগ উঠেছে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে। প্রভাবশালী সেই সিন্ডিকেট চক্রের যোগসাজসে বিশেষ কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে দরপত্রে অভিনব ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বঞ্চিত ঠিকাদাররা।
দরপত্রে দেওয়া শর্তের বিষয়ে আপত্তি তুলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স স্বর্ণা এন্টারপ্রাইজ।
প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী মো. সাহাদৎ হোসেন খন্দকারের লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, দরপত্রে সংযুক্ত শর্তের ১৯ (ছ) অংশে বলা হয়েছে, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ থেকে দরপত্র দাখিলের দিন পর্যন্ত ঠিকাদারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫ (পাঁচ) কোটি টাকা স্থিতি থাকতে হবে। একই ধারার (জ) উপধারায় বলা হয়েছে, হাসপাতালে এমএসআর সামগ্রী সরবরাহে গ্রুপভিত্তিক কাজে বিগত ৫ বছরের মধ্যে কমপক্ষে চার বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে ৬টি গ্রুপে ভিন্ন ভিন্ন দরপত্র বিক্রয় ও জামানত চাওয়া হলেও সকল গ্রুপের জন্য একই পরিমাণ ব্যাংক স্থিতি ( ৫ কোটি টাকা) চাওয়া হয়েছে যা বিধিসম্মত নয়। কারণ সব পণ্যের চাহিদার পরিমাণ এক নয় এবং একজন ঠিকাদার সব গ্রুপের দরপত্র নাও কিনতে পারেন। এছাড়া কয়েকটি গ্রুপে এতো টাকার পণ্য কখনই কেনা হয় না।
তবে ঠিকাদারদের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. শহিদুল্লাহ লিংকন। তিনি বলেন, আমি পিপিআর অনুযায়ী শর্তারোপ করেছি।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশঃ
গত ২২ নভেম্বর দুপুরে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে সচেতন যুব সমাজের ব্যানারে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য আহ্বানকৃত এমএসআর দরপত্রে অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ পালিত হয়েছে।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বিধি বহির্ভুত শর্ত জুড়ে দিয়ে এমএসআর টেন্ডার আহ্বান করেছেন। সিন্ডিকেটভুক্ত বিশেষ ঠিকাদারকে বারবার কাজ দিতেই এমন শর্ত দিয়েছেন যাতে অন্য ঠিকাদাররা কাজ না পান। উৎকোচের বিনিময়ে এই তত্ত্বাবধায়ক কুড়িগ্রামের জনগণের স্বার্থ বিক্রি করে দিয়েছেন। বক্তারা অবিলম্বে এই টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে পুণ:দরপত্র আহ্ববানের দাবি জানান।
তবে বিক্ষোভকারীদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকন। তিনি বলেন, তাদের (বিক্ষোভকারীদের) এমন দাবি ঠিক নয়। আমি বিধি অনুযায়ী টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি।
হাসপাতাল থেকে ঔষধ চুরি ও পাচারঃ
অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালের ঔষধের স্টোর কিপার, ইনচার্জ, সিনিয়র নার্স, মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টসহ প্রশিক্ষণার্থী নার্সরা সরকারি ঔষধ চুরি ও পাচারের সাথে জড়িত। পাচারকৃত সরকারি ওষুধের মধ্যে রয়েছে এভাস, কিলম্যাক্স, ক্যালসিয়াম-ডি, মুভেক্স, সিপ্রো, বিসরল, ট্রাইলক, ভিটামিনসহ দামি ওষুধ। সরকারি এসব ওষুধ কম দামে কিনে বাজারমূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করেন ওষুধ ব্যবসায়ীরা। সরকারি ওষুধ হাসপাতালে না জুটলেও মফস্বলের ফার্মেসীগুলোতে ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল থেকে ব্যাগভর্তি পেলটকস-২ এবং পেনটিড মেগাপিলের প্রায় ৪ শতাধিক ইনজেকশন পাচারের সময় রাশেদা বেগম নামে এক নারীকে আটক করে পুলিশ। এই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে হাসপাতালের সিনিয়র নার্স শাহানাজ সিদ্দিকাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। ঔষুধ চুরির ঘটনায় থানায় একটি মামলাও করা হয়েছ। পুলিশ চার্জশিটও জমা দিয়েছে আদালতে।
চলতি বছর ৬০ লাখ টাকা মুল্যের সরকারি প্রায় এক লাখ জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার মাদারগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে নদী পথে ভারতে পাচারের সময় বিজিবি জব্দ করে। আটকের সময় পাচারকারীরা নদী সাঁতরিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করতে পারেনি বিজিবি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, প্রশিক্ষণার্থী নার্স ও মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টদের কাছে ওষুধের অসংখ্য টোকেন লেখা থাকে। প্রতিদিন এসব টোকেন দিয়ে ওষুধ তোলা হয়। সিনিয়র নার্সরা ডিউটি শেষে প্রতিদিন ওষুধ নিয়ে যান। পরে সেগুলো হাসপাতালের মাস্টাররোলের কর্মচারী এবং বহিরাগত পাচারকারীদের মাধ্যমে বাইরে বিক্রি করা হয়।
গত অক্টোবরে অফিস সহায়ক রেজাউল করিম রেজা ঔষধ পাচারের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন। এর আগেও তিনি বেশ কয়েকবার সরকারি ঔষধসহ ধরা পড়লেও কোনো শাস্তি হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, উৎকোচের বিনিময়ে তিনি নিজেকে রক্ষা করেন। এবার তাকে আইনের আওতায় না দিয়ে ওষুধ বিতরণকক্ষ থেকে সরিয়ে জরুরি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়।
রিপোর্ট আনি দেখং ডাক্তার নাই, সরকারি ঔষধ না পাওয়ার অভিযোগঃ
বুকে ব্যথা অনুভব হওয়ায় কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন খলিলগঞ্জ এলাকার বকশি পাড়ার দিনমজুর রোস্তম আলী। তিনি টাইম বাংলা নিউজ ডট কমকে বলেন, টিকিট কাটি দেড়/দুই ঘণ্টা সিরিয়ালত দাঁড়ে থাকি ডাক্তার দেখানুং। ডাক্তার টেস্ট নেকি (লেখি) দিচে(দিয়েছে)। ইসিজি হাসপাতালোত করিয়া এক্সরে, ইকো আর অন্য টেস্টগুলা অন্যটে করিয়া টেস্ট রিপোর্ট নিয়া আসি দেখং ডাক্তার নাই। সময় শ্যাষ। ডাক্তার চলি গেইছে। এখন রিপোর্ট দেখাইতে ডাক্তারের ব্যক্তিগত চেম্বারত যায়া ৬শ টাকা ফি দিয়া রিপোর্ট দ্যাখে হাসপাতালত ভর্তি হইচং। ভর্তি হওয়ার পর নার্স স্লিপ নেকি দিলে বাইরা থাকি ওষুধ কিনবার। ২/১ টা ওষুধ হাসপাতাল থাকি দেয় আর বাকী সউগ ওষুধ বাইরা থাকি কেনা নাগে। এলা তোমরায় কনতো বাহে, হামার মতোন গরীব মানুষগুলা কেমন করি সরকারি চিকিৎসাসেবা পামো?
কুড়িগ্রাম সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের পাটেশ্বরী এলাকার ফজিলাতুন নেছা পেটের ব্যাথা নিয়ে ৬নং ওয়ার্ডের (মহিলা সার্জারী) ২নং বেডে ১৯ দিন যাবৎ চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, হামরা গরীব মানুষ। বিনা পয়সায় চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হছি। কিন্তু এটে ভর্তি হয়া দেখি ২/১ একটা ওষুধ ছাড়া বাকী সউগ ওষুধ বাইরা থাকি কেনা লাগে। দিন-রাত মিলি ডাক্তার আইসে শুধু সকালে একবার। শুক্রবারসহ বন্ধের দিন ডাক্তার আসে না। এমনকি ঝাড়ুদারও আসে না। বন্ধের দিনে ওয়ার্ডে ঝাড়ুও দেয়া হয় না, মেঝেও পরিস্কার করে না। এজন্য নোংরা আর দুর্গন্ধ বেড়ে যায়। এ তো হলো জেলা সদরের রোগীর চিত্র।
দুর্গম চরগুলোর অনেক রোগীকে তো জরুরি সেবার জন্য হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। নামমাত্র ওষুধ পাওয়া যায়, অধিকাংশ ওষুধ কিনতে হয় বাইরে থেকে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট পেতে দেরি হয়ে গেলে চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে গিয়ে ভিজিট দিয়ে রিপোর্ট দেখাতে হয় নতুবা পরের দিন দেখাতে হয়।
ভর্তি রোগীর দুর্ভোগ বাড়ে শুক্রবারসহ সরকারি ছুটির দিনে। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন সকাল-রাতে চিকিৎসকদের রোগী দেখার নিয়ম থাকলেও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে চিকিৎসকের দেখা মেলে না। বন্ধের দিনে হাসপাতালে রোগী দেখতে কোনো ডাক্তার আসেন না। এমনকি পরিচ্ছন্নতা কর্মীও আসে না। নার্স এবং মেডিক্যাল অ্যাসিসটেন্টরাই চিকিৎসা দেন।
শুক্রবারসহ ছুটির দিনে বন্ধ থাকে বহির্বিভাগ ও প্যাথলজি, চিকিৎসকের দেখা মেলে নাঃ
শুক্রবারসহ ছুটির দিনে বন্ধ থাকে বহির্বিভাগ ও প্যাথলজি। এতে ভোগান্তি আরও বাড়ে ভর্তি রোগীদের। প্রতিদিন সকাল-রাতে চিকিৎসকদের রোগী দেখার নিয়ম থাকলেও কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে শুক্রবারসহ সরকারি ছুটির দিনগুলোতে চিকিৎসকের দেখা মেলে না। বন্ধের দিনে হাসপাতালে রোগী দেখতে কোনো ডাক্তার আসেন না। এমনকি পরিচ্ছন্নতা কর্মীও আসে না। ওয়ার্ডে দেয়া হয় না ঝাড়ু, পরিস্কার করা হয় না মেঝে। ফলে বন্ধের দিনগুলোতে নোংরা আর দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে থাকতে হয় ভর্তি রোগীদের। নার্স এবং মেডিক্যাল অ্যাসিসটেন্টরাই চিকিৎসা দেন।
২১ শে পদক প্রাপ্ত গুণীজন ও বিশিষ্ট আইনজীবি এ্যাড. আব্রাহাম লিংকন বলেন, রোগ দিনক্ষণ বুঝে হয় না। প্রতিদিনই নানা জটিল রোগী হাসপাতালে আসেন। তাই ২৪ ঘণ্টা রোগীর সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ জরুরি। ছুটির দিনে ভালো চিকিৎসাভাবে কোন রোগী মারা গেলে বা ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার দায় চিকিৎসকদের উপরই বর্তাবে।
ব্যবহার হচ্ছে না আইসিইউ সুবিধা সম্বলিত এম্বুলেন্স কুড়িগ্রামে রোগী বহন কাজে ব্যবহার হচ্ছে না ভারত সরকারের দেওয়া আইসিইউ সুবিধার অ্যাম্বুলেন্সটি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আইসিইউ সুবিধার ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১টি অ্যাম্বুলেন্স ওই বছরের ২৯ অক্টোবর কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতালের নতুন ভবনের সামনে দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের কয়েকজন স্টাফ জানান, হাসপাতালে গ্যারেজ না থাকায় পুরোনো দুটি এম্বুলেন্স পুরাতন ভবন ও নতুন ভবনের শেডের নীচে রাখা হলেও ভারতের দেওয়া উপহারের অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘদিন যাবৎ খোলা আকাশের নীচে পড়ে থাকায় কুকুর সম্ভবত নীচের দিকে থাকা বেশকিছু তার বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ফলে সেটি কোন কাজে লাগছে না। এটা প্রশাসনিক উদাসীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাঃ শাহিনুর রহমান সরদার বলেন, আমি সদ্য হাসপাতালে যুক্ত হয়েছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খতিয়ে দেখে অচীরেই আমরা এটি রোগী পরিবহনের জন্য চালু করবো।