November 23, 2024, 7:06 pm
শিরোনাম:
শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছেন কক্সবাজারের নুরুল আফসার শিকদার মনোহরদীতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন মনোহরদীতে দিনব্যাপী পাট চাষী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত মনোহরদীতে মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে বেধরক মারধরের অভিযোগ মনোহরদীতে জনমত জরিপ ও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদ সরকার মনোহরদীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী “আলোকিত গোতাশিয়া” ফেসবুক গ্রুপের পক্ষহতে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে অসহায়দের মাঝে শিল্পমন্ত্রীর ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে খননযন্ত্র ও বালুর স্তুপ জব্দ এতিম শিশুদের নিয়ে ইফতার করলেন মনোহরদীর ইউএনও হাছিবা খান

প্লাষ্টিক-ম্যালামাইনের আধুনিক যুগে অস্তিত্ব সংকটে বাগেরহাটের মৃৎশিল্পীরা

আবু- হানিফ, বাগেরহাট অফিসঃ
  • আপডেটের সময় : শনিবার, অক্টোবর ৩১, ২০২০
  • 258 দেখুন

প্লাস্টিক-ম্যালামাইন এর আধুনিক যুগে মাটির পাত্রের ব্যবহার কমে যাওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে পরেছে বাগেরহাটের তালেশ^রের পালপাড়ার মৃৎশিল্পী বা কুমোরেরা। মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের তালিকায় মাটির তৈরী জিনিসপত্রের চাহিদা কমে যাওয়ায এমন অবস্থা তৈরী হয়েছে বলে দাবী পালপাড়ার কুমোরদের। তবে আধুনিকতার মিশেলে সৈাখিন জিনিপত্র তৈরী করে বাজারজাত করতে পারলে এ সমস্য কাটিয়ে ওটা সম্ভব বলে মনে করেন তারা। এ জন্য সরকারি সহযোগীতার দাবী তাদের। সরোজমিনে বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নের তালেশ^র গ্রামের পালপাড়ার কুমোরদের সাথে কথা বলে জানাযায় এসব তথ্য।

পালপাড়ার কুমোর রনজিৎ কুমার পাল জানান, তার বাপ-দাদার আমল থেকে এই পাল পাড়ায় তাদের বসবাস। তাদের আদি নিবাস কোথায় তা তিনি জানেন না। ছোটবেলা থেকেই তিনি তার বাপ-দাদা ও প্রতিবেশিদের মাটির তৈরী থালা,বাসন, পুতুল ও টালিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরী করে জিবিকা নির্বাহ করতে দেখেছেন। বাবা সষি কান্ত পালের হাত ধরেই এই পেশার সাথে তিনি জড়িয়ে পরেন।

তিনি আরও জানান, মানুষের মাঝে ধীরে-ধীরে যখন প্লাষ্টিক ও ম্যালামাইন এর তৈরী জিনিসপত্রের আধিখ্য দেখা দেয়, তখন ধীরে ধীরে মাটির তৈরী পন্যের চাহিদাও কমতে থাকে। যার প্রভাব পরতে থাকে এই শিল্পের সাথে জড়িত কুমোরদের উপর। চাহিদা কমে যাওয়ায় এ পালপাড়ার অনেকেই কর্মহীন হয়ে পরে। অনেকে বাধ্য হয় পেশা পরিবর্তন করতে। একটা সময় এই পালপাড়ায় শতাধিকের উপরে কুমোর পরিবারের বসবাস থাকলেও এখন মাত্র ২৫ থেকে ৩০টিতে এসে ঠেকেছে। অনেক পরিবার আবার পেটের দায়ে ভিটেমাটি বিক্রি করে ভারতে চলে গেছে বলে জানান তিনি।

রনজিৎ পালের বাড়ী থেকে একটু সামনেই অনন্ত কুমার পালের বাড়ী। বাড়ীর উঠানেই কাদামাটি দিয়ে গাছের চারা রোপনের গোলাকার টালি তৈরীতে ব্যাস্ত তিনি। তিনি বলেন, পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা মিলে সারা মাসে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা উপার্জন করি। যা দিয়ে আমারদের সংসার চালানো দায়। আমি নিজে সারাদিন পরিশ্রম করে যে পরিমান টালি তৈরী করি তার মূল্য ৫০ থেকে সর্বচ্চ ৭০ টাকা। একটা সময় মানুষ ঘরের ছাউনিতে টালির ব্যবহার করতো। ওটাই ছিল আমাদের মূল ব্যবসা। সে সময় আমাদের পালপাড়ার তৈরী টালি ভারতেও রপ্তানি হতো। তখন ব্যবসা ছিল জমজমাট। এখন আর সেই দিন নেই। আমার মত পালপাড়ার অন্যান্য পরিবার গুলোরও একই অবস্থা।

পাশেই প্রতিবেশি নিন্ত নন্দ পালের স্ত্রী তুলসি রানী পাল কাজে ব্যাস্ত। একটু এগিয়ে যেতেই কথা বলতে আগ্রহী হলেন তিনি। তিনি বলেন, এক সময় আমাদের এই পালপাড়ায় দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা আসতেন ব্যবসা করার জন্য। তখন এক একটি পরিবারের যে আয় ছিলো তা দিয়ে খুব ভালো ভাবে সংসার চালানো যেত, এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে যে টাকা ইনকাম হয়, তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না।

এসময় কথা হয় শতবর্ষি আল্লাদী রানী পালের সাথে বয়সের ভারে সোজা হয়ে হাটতে পারেন না তিনি। মেয়ে রাধা রানী পালকে নিয়ে তার সংসার। গেল বছর বাগেরহাট সদর উপজেলার প্রাক্তন নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তানজিল্লুর রহমান তার নিজস্ব অর্থায়নে একটি ঘর নির্মান করে দেওয়ার পাশাপাশি অর্থ দিয়ে সহয়তা করেছেন।

বাগেরহাট সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিজিয়া পারভিন বলেন, অতীত ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি উদ্যোগ এর প্রয়োজন আছে। এছাড়া তালেশ^রের পালপাড়ার মৃৎশিল্পের কারণে দেশব্যাপি বাগেরহাট জেলার আলাদা একটা পরিচিতি আছে। তাই জেলার ঐতিহ্য কুমোর বা মৃৎশিল্পীদের শিল্পকর্ম বাঁচিয়ে রাখতে তিনি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

বাগেরহাট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার প্রন্তিক জনগোষ্টির তালিকা তৈরীর জন্য ইতি মধ্যেই জরিপের কাজ শুরু করা হয়েছে। তাদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আধুনিক এ যুগে মৃৎশিল্পী ধরে রাখতে হলে মাটির পাত্র ব্যবহারের উপকারিতা এবং এর বাজার সৃষ্টির জন্য সকলকে উদ্দ্যোগ নিতে হবে। বাজার সৃষ্টি করা গেলেই মৃৎশিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

বাগেরহাট ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এর উপব্যবস্থাপক মোঃ মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকার ইতি মধ্যেই প্রশিক্ষন ও লোনের মাধ্যমে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে মৃৎশিল্পীকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে দেশ-বিদেশে মাটির তৈরী পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, তালেশ্বরের পালপাড়ার কুমোরদের আধুনিকতার মিশেলে মাটির তৈরী সৈাখিন জিনিপত্র তৈরীতে তাদের কোন প্রকাশ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হলে তার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া মৃৎশিল্পীকে বাঁচিয়ে রাখতে পালপাড়ায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরী ও তাদের ঋন এর মাধ্যমে সহয়তা করা হবে। এছাড়া তিনি কিছুদিনের মধ্যেই তালেশ্বর এর পালপাড়া পরিদর্শন করার আগ্রহ প্রকাশ করেন

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

https://bd24news.com © All rights reserved © 2022

Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102