হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে প্রাক্তন পুলিশ সদস্য ও পুলিশ এথলেটিক দলের সদস্য ভূমিহীন গৃহবধুর থেকে ঘুষ না পেয়ে তাকে ৩ সন্তানসহ ভিটে ছাড়া করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার শরীফখানী ওয়ার্ড মেম্বার ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মাহফুজুর রহমান মামুন ওরফে মামুন মেম্বার।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টায় বানিয়াচং মডেল প্রেসক্লাবে আবেগঘন সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় ভট্রপাড়া গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী সাদিয়া সুলতানা উক্ত অভিযোগ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন কেউ যদি জোর করে আমাকে ভিটে ছাড়া করতে চায় তাহলে আমার আত্মহত্যা ছাড়া বিকল্প কোন পথ থাকবে না।
সংবাদ সম্মেলনে মমতাময়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় সংসদ সদস, জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট ১০ বছর যাবৎ বসবাসরত ভূমিটি তাকে ভিপি বন্দোবস্ত দিয়ে সন্তানদের নিয়ে বসবাসের জোর দাবী জানিয়েছেন ভোক্তভোগী সাদিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে সাদিয়া সুলতানা বলেন, আমি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর একজন প্রাক্তন সদস্য ও জাতীয় এথলেটিক দলের প্রাক্তন খেলোযার । আমার স্বামীর কোন ভূমি না থাকায় বিগত ১০ বছর আগে আমার জীবনের সকল জমানো টাকা দিয়ে বানিয়াচং উপজেলার ৪ নং ইউনিয়নের ভট্রপাড়ার তারেক মিয়ার নিকট থেকে তারই বাড়ির পাশে ৪ শতক ভূমি বিনা রেজিস্ট্রি করে ক্রয় করে সেখানে একটি দালান ঘর তৈরী করি।
ওই ঘরে ১০ বছর যাবৎ আমার সন্তানদের নিয়ে বসবাস করে আসছি এবং ঘরের সামনে একটি ক্ষুদে দোকান খোলে দিনাতিপাত করছি । প্রায় ২০ দিন পূর্বে আমাদের ওয়ার্ড মেম্বার মাহফুজুর রহমান মামুন আমার নিকট মুঠোফোনে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ চায়। ঘুষ না দিলে আমার ঘর ভেঙ্গে অন্যকে দিয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। যার কল রেকর্ড আমার কাছে সংরক্ষিত আছে।
এর ৩ দিন পর বানিয়াচংয়ের ইউনও জনাব মাসুদ রানা ও মেম্বার মামুন আমার দোকান ঘর ও বসত ঘরের কিছু অংশ ভেঙ্গে মোট ২ শতক জায়গায় অন্যজনকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন হিসেবে ঘর তৈরী করে দেন। ওই সময় ইউএনও স্যার আমাকে কথা দিয়েছিলেন যে, বাকী ২ শতক ভূমি যেখানে আমার ঘর আছে সেটি ভিপি বন্দোবস্ত দিবেন। আমি উনার কথা মতো আবেদনও করি।
কিন্তু গত শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) আমি জানতে পারি আমার ১০ বছর যাবৎ দখলীয় ভূমি ও আমার টাকায় তৈরী করা ঘরসহ মামুন মেম্বার মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ইউএনও স্যারকে ভুল বুঝিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ওই ভুমিখানা আমার দেবর কাউছার মিয়ার নামে বন্দোবস্ত অনুমোদন করিয়েছে।
অথচ কাউছার মিয়া তার মায়ের ভুমিতে বিলাস বহুল দালান ঘরে বসবাস করছে। এমতাবস্থায় আমি আমার বসত ঘর যদি কেহ দখল কিংবা ভেঙ্গে ফেলতে চায় তাহলে আমি আমার অবুঝ ৩ সন্তান নিয়ে কোথায় যাবো। আমার এই ভিটে ও ঘর ছাড়া আর কোন সম্বল নাই।
আমি আপনাদের মাধ্যমে মমতাময়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব এ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান ও জেলা প্রশাসক মহোদয়, উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় এবং ইউএনও মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি যে আপনারা আমার মাথাগোঁজার ঠাইটুকু কেড়ে নিতে দিবেন না।
আমাকে আমার দখলীয় ভূমি বন্দোবস্ত দিয়ে আমাকে বসবাস করার সুযোগ করে দেওয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি এবং ঘুষখোর মামুন মেম্বারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ারও দাবী জানাই।
ভুক্তভোগী সাদিয়া সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন আমি লোক মারফতে জানতে পারি সরকার ভুমিহীনদের ভিপি বন্দোবস্ত প্রদান করছেন। তখন ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে আমি ইউএনও বরাবর আবেদন করি। আবেদনের কপি আমার কাছে সংরক্ষিত আছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যেহেতু এই ঘর ও ভূমি ছাড়া আমার থাকার কোন জায়গা নেই সে কারনে আমি এই ঘরের দখল ছাড়বো না। আর কেউ যদি জোর করে আমাকে ভিটে ছাড়া করতে চায় তাহলে আমার আত্মহত্যা ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা থাকবে না।