বরিশাল শিল্পকলা একাডেমি
কালচারাল অফিসার অসিত বরন পালিয়ে গেল গভীর রাতে
|
![]() ![]() বরিশাল অফিস: দুর্নীতি -অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের কারনে অসিতকে বদলী করা হয় প্রথমে কুড়িগ্রামে।পরে একই আদেশে আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে বদলী করা হয়। বরিশালে কালচারাল অফিসার পদে বদলী করা হয় পটুয়াখালীর কালচারাল অফিসার তানবীর রহমানকে।
সম্প্রতি বরিশালে দীর্ঘদিন পর পালা নাটক মঞ্চায়ন হয়। নাটক শেষে অংশগ্রহণকারীদের সনদও প্রদান করা হয়। কিন্তু ব্যত্যয় ঘটে শেষে। কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাশ গুপ্ত ও নাটকের সহকারী নির্দেশক অপূর্ব গোমস্তা ঋক নাটকে অংশগ্রহণকারীদের হাতে মাত্র ৫শ টাকা করে ধরিয়ে দেয়। শিল্পীরা এত কম টাকা নিতে অসম্মতি জানালে তারা চড়াও হয় শিল্পীদের উপর। জানিয়ে দেয় এক টাকাও পাবে না তারা। এর পরই শিল্পীরা গভীর রাত অবধি বিক্ষোভ প্রকাশ করে। কালচারাল অফিসারকে অবরুদ্ধ করে। তার বিরুদ্ধে মিছিল হয়। সংবাদ কর্মীরা জড়ো হয়। বরিশালের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দও উপস্থিত হন। পুলিশ আসে। অবশেষে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লুচিকান্ত হাজং গভীর রাত আনুমানিক সাড়ে বারোটায় শিল্পীদের সম্মানজনক সম্মানী প্রদানের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। এদিকে একটি সূত্রে জানা যায়, বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষকদের সঠিকভাবে সম্মানী প্রদান করেন নি কালচারাল অফিসার। বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগে বিভিন্ন বিষয়ে ১২ জন প্রশিক্ষক রয়েছে। সাবেক জেলা কালচারাল অফিসার মো: হাসানুর রশীদ ২০২৪-২০২৫ সালের প্রশিক্ষকদের নিয়োগ চুক্তিনামা নির্ধারিত সময়ে নবায়ন করতে পারেনি। এতে পরবর্তীতে নবায়ন নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। বর্তমান কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাস গুপ্ত গত ১২ জানুয়ারি বরিশাল শিল্পকলায় যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি বিষয়টি রাজনৈতিক খাতে প্রভাবিত করে নতুন নিয়োগের ব্যবস্থা করে। এদিকে প্রশিক্ষকদের ক্লাসও চালিয়ে যেতে বলেন এবং হিসেব মতো তাদের সম্মানী প্রদানের আশ্বাস দেন। কিন্তু গত ১ জুলাই ২০২৫ তারিখ কালচারাল অফিসার স্বাক্ষরিত একটি নোটিশের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ বিভাগের সব ক্লাস বন্ধ করে দেয়া হয়। বিষয়টি পত্র পত্রিকায় ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ঢাকা শিল্পকলার নির্দেশে পূর্বের প্রশিক্ষক দিয়েই ক্লাশ শুরু করা হয়। তখন কালচালার অফিসার মৌখিকভাবে জানায়, তাদের পরবর্তীতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন প্রশিক্ষক যোগদান হওয়ার আগ পর্যন্ত শিল্পকলার নিয়ম অনুযায়ী সম্মানী প্রদান করা হবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ১৪ নভেম্বর ২০২৪ থেকে প্রশিক্ষকদের সম্মানী বর্ধিত করে। যা ঐ তারিখ থেকে কার্যকর বলে নির্দেশ দেয়। কিন্তু কালচালার অফিসার অসিত বরণ এসব নিয়ম তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছে মতো অর্ধেকেরও কম টাকা প্রদান করে প্রশিক্ষকদের। এতে প্রশিক্ষকবৃন্দ জোর আপত্তি জানায়। অসিতের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ:অনিয়ম দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ,নারী কেলেঙ্কারি,সরকারি অর্থ আত্মসাৎ,অর্থ তসরুপ, শিল্পী সম্মানীতে নয়ছয়ের অভিযোগ।রেস্ট হাউজের ভাড়া প্রদান না করা।হল ভাড়া থেকে শুরু করে নামে-বেনামে একাধিক অনুষ্ঠান করে হরিলুট করেন অসিত। ২০১৬ সালে সিলেটে নারী ঘটিত একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, যা পরবর্তীতে গণমাধ্যমেও আলোচিত হয়। ২০২৪ সালে সিলেটে তার অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ হয়, এবং ২০২৫ সালে তাকে বরিশালে বদলি করা হয়। বরিশালে যোগদানের পর তিনি সরকারি রেস্ট হাউজে পরিবারসহ অবৈধভাবে বসবাস করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেন।এছাড়া হলরুম ভাড়ার টাকা গোপন রেখে ব্যক্তিগতভাবে আত্মসাৎ এবং বরিশাল শিল্পকলার ৭০ লাখ টাকা থেকে মাত্র সাতাশ হাজার টাকা রেখে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন। অসিতের সাথে অর্থ লুটপাটকারী সহযোগীদের বিচার দাবী করেছে সাধারন শিল্পীরা।অসিতের বদলির খবর ছড়িয়ে পড়লে শিল্প সমাজে স্বস্তি নেমে আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই খবরে শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে ‘হাফ ছেড়ে বাঁচার’ প্রতিক্রিয়া দেখান। অসিত বরণ দাশ বরিশাল শিল্পকলা একাডেমীতে যোগদানের পরেই লুটপাট শুরু করলে সর্বপ্রথম ইত্তেহাদ নিউজ অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করে।সংবাদ প্রকাশের পরই শিল্পীসহ বরিশালে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। |