মানসিক স্বাস্থ্য, এই ব্যাপারে বেশিরভাগ মানুষই উদাসীন। শরীরের কোনো রোগ হলে দৌড়ে যান চিকিৎসকের কাছে। কিন্তু মনের রোগ? মনের রোগের খবর কজন রাখি আমরা। মন খারাপকেই পাত্তা দেই না সেখানে বিষণ্নতা বা মানসিক রোগ তো অনেক দূরের বিষয়।
আজ ১০ অক্টোবর, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এটি সেই দিন, যখন আমরা বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনে মানসিক অসুস্থতার প্রভাব নিয়ে কথা বলি। এই দিনটি কোটি কোটি মানুষকে মানসিক অসুস্থতার প্রভাব সম্পর্কে আরও সচেতন ও সতর্ক করার একটি সুযোগ।
গবেষণা বলছে, বিশ্বে প্রতি দু’জনের মধ্যে অন্তত একজন জীবনে কোনো না কোনো সময় মানসিক অসুস্থতার শিকার হন। বর্তমানে ৯০ কোটিরও বেশি মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে লড়ছেন, যা আজকের বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি। যদিও কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে এই বিষয়ে আলোচনা বেড়েছে, কিন্তু সমাজে গেঁথে থাকা কলঙ্কের ভয়ে অনেকেই আজও নিজেদের অভিজ্ঞতা খোলাখুলি বলতে পারেন না।
কেন এই দিনটি এত জরুরি? বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস প্রথম শুরু হয় ১৯৯২ সালে। এর মূল লক্ষ্য ছিল তিনটি- ১. মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো কতটা সাধারণ, সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো। ২. এর সঙ্গে যুক্ত কলঙ্ক দূর করার জন্য লড়াই। ৩. মানসিক সমস্যায় থাকা মানুষদের জন্য উন্নত চিকিৎসা ও পরিচর্যার দাবি জানানো।
বর্তমানে অনেক দেশেই এটি শুধু একদিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যেমন অস্ট্রেলিয়ায় ১০ অক্টোবরকে ঘিরে ‘মানসিক স্বাস্থ্য সপ্তাহ’ পালিত হয়। প্রতি বছর এই দিবসের একটি নির্দিষ্ট থিম থাকে, যেমন: ২০২৫ সালে থিম হলো, ‘বিপর্যয় ও জরুরি পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্য’।
এই প্রতিপাদ্যের মূল লক্ষ্য হলো সংঘাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বাস্তুচ্যুতির মতো সংকটকালে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এটি বিশ্বব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব তুলে ধরে এবং জরুরি অবস্থায় মানুষের মানসিক সুস্থতা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়।
এই প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি, সহানুভূতি গঠন এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে মানবিক সহায়তার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
নিজের যত্ন নিন, সবসময় ফুরফুরে থাকুন। নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া কিন্তু আমাদের নিজেদেরই দায়িত্ব। আসুন কীভাবে-
১. শরীরচর্চায় মনকে সুস্থ রাখুন
আমরা সবাই জানি ব্যায়াম শরীরের জন্য ভালো, কিন্তু এটি যে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয়-তা কি আমরা জানি? নিয়মিত শরীরচর্চা উদ্বেগ ও হতাশা কমাতে দারুণভাবে সাহায্য করে। এছাড়া প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটালে মানুষের মানসিক চাপ কমে যায় এবং তারা শান্ত বোধ করে। তাই পার্কে বা খোলা জায়গায় হেঁটে আসুন, শরীরচর্চাটাও হয়ে যাবে।
২. সঠিক ডায়েট
আপনার খাবারদাবার আপনার মেজাজ বদলে দিতে পারে। চিপস, কেক বা চকলেট জাতীয় খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ে এবং কমে, যার ফলে আপনি সহজেই ক্লান্ত বা খিটখিটে হয়ে যেতে পারেন। তাই নিশ্চিত করুন, আপনার খাদ্যতালিকায় যেন পর্যাপ্ত ফল ও সবজি থাকে। এর ফলে মন ভালো রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো আপনি পাবেন। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান করাটা ভীষণ জরুরি; তৃষ্ণার্ত থাকলে মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
বিজ্ঞাপন
৩. অন্যদের সঙ্গে কথা বলুন, একা থাকবেন না
একটু একা থাকার সময় আমাদের সবারই দরকার। নিজের সঙ্গে সময় কাটানো জরুরি। তবে অন্যদের সঙ্গে সময় কাটানো মানসিক সুস্থতার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি একাকীবোধ করেন, তবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করতে পারেন। এতে নতুন মানুষের সঙ্গে মেশা হবে এবং অন্যকে সাহায্য করার দারুণ অনুভূতিও পাবেন। একটি জরিপে দেখা গেছে, যারা দুই বছরের বেশি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন, তাদের ৪৮ শতাংশই হতাশা কমে যাওয়ার কথা বলেছেন।
আপনার যদি ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা পরিবার থাকে, তবে আপনার মনের কথা তাদের সঙ্গে ভাগ করে নিন এবং তাদের কাছে সাপোর্ট চান। মনে রাখবেন, মানসিক অসুস্থতা নিয়ে যখনই কেউ কথা বলে, তখনই সমাজের কলঙ্ক কমতে শুরু করে।
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে আপনি কী করতে পারেন?
এই দিনটি আমাদের নিজেদের এবং অন্যের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আরও বেশি সচেতন হতে উৎসাহ দেয়। নিজের যত্নের পাশাপাশি অন্যদের কীভাবে সাহায্য করা যায়, তা নিয়ে ভাবুন। যেমন-উদ্বেগ ও হতাশার মতো সাধারণ সমস্যাগুলো সম্পর্কে জেনে নিন, যাতে আপনার বন্ধু বা সহকর্মীর সমস্যা হলে আপনি তাদের আরও ভালোভাবে বুঝতে পারেন।
এছাড়াও আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রকে একটি ‘সুস্থতা কর্মসূচি’ শুরু করতে উৎসাহিত করতে পারেন, যা সবার জন্য ভালো হবে। এই কর্মসূচিতে হয়তো বিনামূল্যে ব্যায়াম ক্লাসের ব্যবস্থা করা হবে বা দুপুরে কর্মীদের হাঁটতে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হবে। যে কোম্পানিগুলোতে এমন কর্মসূচি চালু আছে, তারা দেখেছে যে কর্মীদের অসুস্থতার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে আপনার করা ছোট্ট একটি কাজও, এমনকি শুধু এই বিষয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলাও, আমাদের সবাইকে মানসিক স্বাস্থ্যকে আরও ভালোভাবে বুঝতে এবং সাপোর্ট করতে সাহায্য করবে।