November 23, 2024, 7:28 am
শিরোনাম:
শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছেন কক্সবাজারের নুরুল আফসার শিকদার মনোহরদীতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন মনোহরদীতে দিনব্যাপী পাট চাষী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত মনোহরদীতে মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে বেধরক মারধরের অভিযোগ মনোহরদীতে জনমত জরিপ ও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদ সরকার মনোহরদীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী “আলোকিত গোতাশিয়া” ফেসবুক গ্রুপের পক্ষহতে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে অসহায়দের মাঝে শিল্পমন্ত্রীর ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে খননযন্ত্র ও বালুর স্তুপ জব্দ এতিম শিশুদের নিয়ে ইফতার করলেন মনোহরদীর ইউএনও হাছিবা খান

মানবিক কাজের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন পুলিশ কনস্টেবল দোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেটের সময় : সোমবার, মার্চ ৮, ২০২১
  • 341 দেখুন

পুলিশ কনস্টেবল মেহেদি হাসান দোলন। কখনও তিনি ছুটে যান অসহায় মানুষের পাশে, কখনও শীতার্ত মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেন উষ্ণতা। আবার কাউকে স্বাবলম্বী করতে স্থায়ী বা ভ্রাম্যমাণ কোনো ব্যবসার ব্যবস্থা করে দেন। কৃষকের পাশে হাজির হন কীটনাশক, সার, বীজ নিয়ে। কখনও কখনও তাকে দেখা যায়, পাঠশালায় পড়াতে। আর এসব কাজ তিনি করে যাচ্ছেন ব্যক্তি উদ্যোগে। সামান্য বেতনের কিছু অংশ দিয়ে।

করোনাকালে মানুষ যখন ঘরবন্দি, তখনও মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন পুলিশের এ কনস্টেবল। রাস্তার পাশে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন তিনি। মেহেদি হাসান দোলনের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের পাটারীরহাটে। বর্তমানে বান্দরবান পুলিশে কর্মরত।

ইতিমধ্যে তার সামাজিক কাজের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে। মানবিক কাজ করে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। একজন মানবিক পুলিশ হিসেবেই লোকমুখে পরিচিত।

মানবিক পরিবেশ
মেহেদি হাসান দোলন ২০১৬ সালের আগস্টে পুলিশে যোগ দেন। পুলিশে যোগ দেওয়ার পর থেকেই গাছ লাগানো শুরু করেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২৪ হাজার বৃক্ষ রোপণ করে সাড়া জাগিয়েছেন। পরিবেশ বদলে দিয়ে যেন পরিবেশ বন্ধু তিনি। রাস্তার পাশে গাছ লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে দোলন ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যেসব মানুষ বৃক্ষপ্রেমী, গাছ লাগাতে ইচ্ছুক তাদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেছেন তিনি।

গাছ লাগানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউটিউবে পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন ভিডিওতে দেখেছি, আমাদের পরিবেশ ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। তাপমাত্রা বাড়ায় সমুদ্রে থাকা বড় বড় বরফ খণ্ড গলে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এমনটা চলতে থাকলে পৃথিবী হুমকির মুখে পড়বে। সেই জায়গা থেকে দেখি যে কেবল গাছই আমাদের এ কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে পারে। সে জন্য গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এ উদ্যোগের নাম দিয়েছি মানবিক পরিবেশ।

মানবিক উদ্যোগ
কর্মস্থলে মানবিক কাজের অনন্য এক নজির গড়েছেন তিনি। নিজের বেতনের কিছু অংশ দিয়ে সাত জন অসহায় মানুষকে দোকান করে দেওয়ার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করেছেন। এদের মধ্যে পাঁচ জনকে স্থায়ী ও দুই জনকে ভ্রাম্যমাণ দোকানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তারা এখন নিজেরাই নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করছে।

মানবিক কৃষি
পাহাড়ি জনপদে কৃষিকাজের জন্য টাকা দিয়ে জমি বর্গা নিতে হয়। এমন কয়েক জনকে টাকা দিয়ে বর্গা জমি চাষের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অর্ধশত মানুষকে চাষের জন্য সার, বীজ, কীটনাশক, ঔষধ ও পরামর্শ দিয়ে পাশে থেকেছেন দোলন।

তিনি বলেন, ‘এক নারীকে সাত হাজার টাকা দিয়ে শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ, সার ও কীটনাশক কিনে দেই। পাশাপাশি পরামর্শ দেই। এক পর্যায়ে ওই নারী ৪৫ হাজার টাকার শাক-সবজি বিক্রি করেন। যেটা স্থানীয় কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের নজরে আসে। সেজন্য আমাকে সম্মানিতও করা হয়।’

মানবিক পাঠশালা
প্রান্তিক জনপদে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে দুই বছর আগে মেহেদি হাসান দোলন বান্দরবানের পাহাড়ি জনপদে ‘মানবিক পাঠশালা’ নামের একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ওই স্কুলে বর্তমানে ৬২ জন শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছেন। শুরুতে স্কুলের অবকাঠামো বেশি সুবিধাজনক না হলেও পর্যায়ক্রমে স্কুলটি উন্নত হয়। বর্তমানে ওই স্কুলে দুজন শিক্ষক স্বেচ্ছায় পড়াচ্ছেন।

পরিবর্তনের গল্প জানতে চাইলে মেহেদি হাসান বলেন, ‘অত্যন্ত দুর্গম এ পাহাড়ি অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়বে, সেটা অনেকটাই দুরূহ ব্যাপার ছিল। স্কুল প্রতিষ্ঠার পর শিশুরা ধীরে ধীরে স্কুলমুখী হয়েছে। ওরা নিজের নাম লেখার আনন্দে মেতেছে। ওরা নতুন কিছু শিখছে। জ্ঞানের জগতে বিচরণ করছে। তাদের অভিভাবকদের মধ্যে এ নিয়ে এক ধরনের আনন্দ দেখতে পাই। তারাও অনেক সচেতন হয়েছেন। শিশুদের দেখাশোনা করছেন।’

দোলন বলেন, ‘যেহেতু একটা বাহিনীতে আছি, চাইলেই অনেক কিছু করতে পারি না। কোনো কাজ করতে গেলে অফিসিয়ালি অনুমতি নিতে হয়। কোথাও গেলে একটা সীমাবদ্ধতা থাকেই। পাহাড়ি জনপদ, দুগর্ম এলাকাতে কাজ করাও অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও কাজের সূত্রে করে যাই।’তিনি আরো বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে চারটি শার্ট আর দুটি প্যান্ট পরেই চলছে আমার। বেতনের যে ১৫ হাজার টাকা পাই তার ১০ হাজার টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। বাকি পাঁচ হাজার টাকার দেড়-দুই হাজার টাকা আমার খাবারে যায়, বাকি যে তিন হাজার টাকা থাকে, সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক কাজ করি।

সামাজিক কাজের অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে পুলিশ কনস্টেবল মেহেদী হাসান দোলন বলেন, ‘পুলিশের একজন সদস্য হিসেবে এসব মানবিক কাজ করতে পারায় আমি অনেক আনন্দিত। সাধারণ মানুষ যেভাবে পুলিশের ভয়ে আতঙ্কে থাকে, আমার ক্ষেত্রে বিষয়টা একদমই ব্যতিক্রম। আমাকে দেখলে মানুষ মনে করে যে তাদের বন্ধু এসেছে, পুলিশ ভাই এসেছে। তাদের জন্য কিছু করতে এসেছে। এই যে ভালো লাগা, এখান থেকেই কাজের শক্তি পাই।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

https://bd24news.com © All rights reserved © 2022

Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102