
বরিশাল খবর অনলাইন নিউজ : প্রবল বর্ষণের সাথে সময়মত রক্ষণাবেক্ষণ সহ উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে কালক্ষেপণে বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা এবং বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক ও বরিশাল-ঝালকাঠি-রাজাপুর-ভান্ডারিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক সহ এ অঞ্চলের প্রায় ১৭শ কিলোমিটার সড়কের পরিস্থিতি সর্বকালের নাজুক পর্যায়ে। নানা প্রতিবন্ধকতায় এসব জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের মেরামত ও পুনর্বাসনের কাজ শুরুই হচ্ছে না। অথচ প্রতিনিয়তই এসব মহাসড়কে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ পণ্য নিয়ে যানবাহন চলছে। এমনকি ২০২২-এর ২৬ জুন পদ্মা সেতু চালু হবার পরে বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা মহাসড়ক সহ এ অঞ্চলের সব সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহন চলাচল তিন গুনেরও বেশী বেড়েছে। পায়রা বন্দর চালু হবার পরে প্রতিদিনই ৩৫-৪০ টনের কন্টেইনার-বাহী ট্রেইলর সমূহ ঢাকা সহ দেশের বিভিন্নস্থানে যাচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী সড়ক সমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধি দুরের কথা, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত হচ্ছে না।
ফলে বরিশাল সহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা ক্রমশ ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় পৌছেছে। বিভিন্ন সড়ক বিভাগ থেকে জোড়াতালি দিয়ে সড়ক যোগাযোগ সচল রাখতে নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হচ্ছে। তবে তহবিল সংকটে সেসব কাজেও বিপত্তি ঘটছে।
১৯৬০ থেকে ’৬৫ সালের মধ্যে মাত্র ৫ টন ধারণ ক্ষমতার ১২ ফুট প্রশস্ত বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা মহাসড়ক এবং ১৯৭৮-৮২ সালের মধ্যে ১০ টন বহনক্ষমতার বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক এবং ১৯৮৮-৯৬ সালের মধ্যে ১০টন বহনক্ষম পটুয়াখালী-কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়ক নির্মাণের পরে ২০২২ সালের দিকে কলাপাড়া থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত লিংক রোড নির্মিত হয়। তবে তার বহনক্ষমতাও ২৫ টনের বেশী নয়।
কিন্তু এসব সড়ক ও মহাসড়ক সমূহের উন্নয়ন দুরের কথা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত প্রায় বন্ধের পথে। ফলে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক অধিদপ্তরের প্রায় ১৭শ কিলোমিটার রাস্তাঘাটের অবস্থা এখন খুব ভাল নেই। একদিকে নজির বিহীন প্রবল বর্ষণ, অপরদিকে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সড়ক মহাসড়ক সমূহ ক্রমশ নাজুক অবস্থায় পৌছেছে।
তবে ইতোমধ্যে বেশ কিছু সড়ক মেরামত ও উন্নয়নে দরপত্র আহবান করা হয়েছে। কিন্তু সেসব দর প্রস্তাবের যাচাই বাছাই সম্পন্ন করে এখনো নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে কোন কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কের বরিশাল অংশের গড়িয়ার পাড় থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার এবং জয়শ্রী থেকে কাসেমাবাদ পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার পর্যন্ত দুটি প্যাকেজে ১৪ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রসস্তকরণ সহ পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দরপত্র আহবান করে মূল্যায়নের শেষে সড়ক অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে । কিন্তু প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ এ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ কাজে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সহ কবে কাজ শুরু হবে তা এখনো অজ্ঞাত। এ মহাসড়কেরই কাসেমাবাদ থেকে বার্থি পর্যন্ত আরো প্রায় ১০ কিলোমিটার মহাসড়ক কোনমতে জোড়াতালি দিয়ে সচল রাখা হয়েছে। ঐ অংশে একবার প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হলেও বর্ষণ প্রলম্বিত হওয়ায় তা পূণঃ মূল্যায়ন করে দরপত্র আহবান করতে হবে।
অপরদিকে বরিশালÑঝালকাঠি-রাজাপুর-ভান্ডারিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রায় ১৮ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক পর্যায়ে। এ সড়কটির পরিপূর্ণ মেরামতে ১৮ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ একটি প্রকল্পের দর প্রস্তাবসমুহ মূল্যায়ন শেষে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে। এ মহাসড়কটির ওপরই সুদূর চট্টগ্রাম থেকে লক্ষ্মীপুর-ভোলা হয়ে সমগ্র বরিশাল বিভাগের সাথে খুলনা বিভাগ ও মোংলা বন্দরের সড়ক যোগাযোগ নির্ভরশীল।
তবে বরিশাল ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বরিশাল অংশের বিশ^বিদ্যালয় মোড় থেকে ভোলা লিংক রোডের প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশের পরিপূর্ণ মেরামত কাজের দরপ্রস্তাব অতি সম্প্রতি অনুমোদন লাভ করায় আগামী সপ্তাহে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হচ্ছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে বরিশালের ভুরঘাটা থেকে মোস্তফাপুর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এবং মোস্তফাপুর থেকে টেকেরহাট পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার অংশে দুটি প্যাকেজে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার, প্রসস্তকরণ সহ ওভার-লে’র কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে বলে জানা গেছে। একই মহাসড়কের টেকেরহাট থেকে ভাংগা পর্যন্ত ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ কিলোমিটার মহাসড়কের সংস্কার, প্রসস্তকরণ সহ ওভারলে’র কাজ চলমান রয়েছে। বর্ষা শেষ হলেই এ অংশে ওভার-লে সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে সড়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। এমনকি ৫০ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ ভাংগা থকে ফরিদপুর শহর পর্যন্ত অবশিষ্ট ৩০ কিলোমিটার অংশের কিছু কিছু অংশে মেরামত কাজ ইতোমধ্যে শুরু হলেও তার গতি খুবই ধীর। এ অংশে কয়েকটি প্যাকেজে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সড়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল।
তবে সমগ্র ‘দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রাণ’ বরিশাল-ফরিদপুর অংশের ভাংগা পর্যন্ত প্রায় ৯১ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কটি যেকোন মূল্যে নির্বিঘ্ন ও সচল রাখতে না পাড়লে তা এ অঞ্চল সহ সারা দেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল।
সড়ক অধিদপ্তরের বরিশালে জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সহ দায়িত্বশীল মহলের মতে এবারের নজিরবিহীন প্রবল বর্ষণ দেশের ৮ নম্বর জাতীয় মহাসড়কটি সহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব সড়কের অবস্থাই সর্বকালের নাজুক পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
গত বছর নভেম্বর থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত লাগাতার বৃষ্টিপাতের ঘাটতির পরে মে মাসে বরিশালে স্বাভাবিক ২৩৯ মিলিমিটারের স্থলে ২৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। জুনমাসেও বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১২.৩% বেশী। জুলাই মাসেও স্বাভাবিকের প্রায় ৬৫% বেশী হয়েছে বরিশালে।
অপরদিকে ২০১৫ থেকে ’১৮ সালে মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থে বরিশাল-ফরিদপুর ও বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সহ বিস্তারিত পথ নকসা ও টেন্ডার ডকুমেন্ট প্রস্তুত হলেও সে লক্ষ্যে পরবর্তীতে আর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি জাতীয় এ মহাসড়কটি প্রশস্ত করণের লক্ষ্যে ভ’মি অধিগ্রহণ কাজটিও গত ৭ ধরে ঝুলে আছে। ফলে ২০১৮ সালে ভ’মি অধিগ্রহণে বরাদ্দকৃত ১,৮৫৪ কোটি টাকার স্থলে এখন প্রয়োজন হবে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশন পূর্বের বরাদ্দকৃত অর্থেই বরিশাল বাইপাস বাদ দিয়ে ফরিদপুর থেকে বরিশালের লেবুখালী পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ সীমিত করার নির্দেশনা দিয়েছে।
এমনকি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক আরো এক বছরেরও বেশী সময় আগে পূর্বের ‘সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ ও ‘পথনকশা’ বাদ দিয়ে নতুনকরে সবকিছু করতে বললেও সড়ক অধিদপ্তর থেকে সে লক্ষ্যে আর তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে জানা গেছে।