আমতলীতে ১৬ শিক্ষক-কর্মচারীর মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ১৫
প্রকাশ: ৮ অক্টোবর, ২০২৫, ২:১৩ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
অনলাইননিউজ: বরগুনার আমতলীতে ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ১৫ জন। এসব শিক্ষার্থীর পেছনে সরকার বছরে অর্ধ কোটি টাকা ব্যয় করছে।
অভিযোগ রয়েছে- কমিটি, শিক্ষক ও স্থানীয় দ্বন্দ্বের কারণে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী আসছে না। ফলে দিন দিন শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ঘটনা আমতলী উপজেলার উত্তর কালামপুর হাতেমিয়া দাখিল মাদ্রাসায়।
সুপার (ভারপ্রাপ্ত) কামরুজ্জামান কবিরের দাবি বর্ষার মৌসুমে শিক্ষার্থী কিছুটা কম আসে। স্থানীয় বাসিন্দা ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দাবি শিক্ষার্থীই কম।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের উত্তর পূর্ব কলাগাছিয়া গ্রামে উত্তর কালামপুর হাতেমিয়া দাখিল মাদ্রাসাটি ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা অনিয়মের মধ্যে দিয়ে চলে আসছে মাদ্রাসাটি। দীর্ঘ দিন ধরে কমিটি-শিক্ষক ও স্থানীয়দের দ্বন্দ্ব এবং কমিটির অযাচিত হস্তক্ষেপ ও নানা অনিয়মের কারণে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে।
গত বছর ওই মাদ্রাসা থেকে ৩৭ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও পাশ করেছে মাত্র ৭ জন। ২০২৬ সালে দাখিল পরীক্ষায় ৩৬ জন অংশগ্রহণের কথা থাকলেও মাদ্রাসায় আসছে মাত্র দুজন।এছাড়া ইবতেদায়ী শাখায় শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। কাগজে কলমে মাদ্রাসায় ইবতেদায়ী শাখাসহ তিন শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে রয়েছে মাত্র ১৫ জন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ২০ থেকে ২৫ জনের বেশী শিক্ষার্থী কোনো সময়ই উপস্থিত হয় না।তারা আরও বলেন, আগের সভাপতি ইব্রাহিম খলিল তার ভাই আব্দুল জলিলকে নৈশপ্রহরী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন, শিক্ষকদের চেয়ারে বসে থাকেন। মনে হয় তিনিই শিক্ষক।
মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টায় মাদ্রাসায় চারটি শ্রেণিকক্ষে মাত্র ১৫ শিক্ষার্থী পাঠদান করছে। এর মধ্যে দশম শ্রেণিতে ২ জন, নবম শ্রেণিতে দুজন ও অন্য দুই ক্লাশে ১১ শিক্ষার্থী রয়েছে। নৈশপ্রহরী আব্দুল জলিল মাদ্রাসায় এসে শিক্ষকদের চেয়ারে বসে আছেন। সুপার (ভারপ্রাপ্ত) কামরুজ্জামান কবির মাদ্রাসায় আসেননি। তিনি দাফতরিক কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি মাসের অধিকাংশ সময় ঢাকায় থাকেন। মাঝে মধ্যে এসে খাতায় স্বাক্ষর করেন।মাদ্রাসার সহসুপার মাওলানা ফারুক হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে শিক্ষার্থী কম এসেছে। বৃষ্টি ছাড়া বেশি শিক্ষার্থী আসে।
তিনি আরও বলেন, এ মাদ্রাসায় কোনো অনিয়ম নেই।মাদ্রাসার সাবেক সুপার মাওলানা আব্দুল হাই বলেন, অনিয়মে ভরপুর ওই মাদ্রাসা। সুপার (ভারপ্রাপ্ত) কামরুজ্জামান কবির ভুয়া নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, সে সব সময় ঢাকায় থাকেন। মাসে দুই-একবার মাদ্রাসায় এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে চলে যান। যত অনিয়মের মূলে ভারপ্রাপ্ত সুপার কামরুজ্জামান কবির।মাদ্রাসা সুপার মো. কামরুজ্জামান কবির মাদ্রাসায় অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি দাফতরিক কাজে ঢাকায় আছি। বর্ষার মৌসুমে শিক্ষার্থী একটু কম আছে।
তিনি আরও বলেন, এলাকায় পরপর তিনটি মাদ্রাসা থাকায় শিক্ষার্থী কিছুটা কম।আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াদ হাসান বলেন, মাদ্রাসার অনিয়মের বিষয়ে আমি জেনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, ১৫ শিক্ষার্থী দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।