রবিবার ১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   রবিবার ১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ



করোনার প্রভাব এবং ডিজিটাল সেলুনের প্রসারে উধাও ভ্রাম্যমান সেলুন
প্রকাশ: ২৬ জুন, ২০২১, ৭:০১ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

করোনার প্রভাব এবং ডিজিটাল সেলুনের প্রসারে উধাও ভ্রাম্যমান সেলুন

সাব্বির আলম বাবু, বিশেষ প্রতিনিধি:
দেশব্যাপী মহামারী করোনার প্রভাবে বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের সাথে সেলুন ব্যবসায়ীরাও সরকার ঘোষিত লকডাউনে এখন কর্ম বিরতিতে আছে। করোনার ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পেতে ও প্রতিরোধ করার জন্যই সরকারের সুদুর প্রসারী এই সিদ্ধান্ত। নুন আনতে পান ফুরায় এরকম হাজারো পরিবার এখনো বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড তথা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে স্থায়ী আসন নিয়ে বসবাস করছে। সরকার যতই দারিদ্রতা নিরসন বা পুনর্বাসনের মিশন-ভিষন তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরীর শ্লোগান তুলুক না কেনো ক্ষুদ্র পেশাজীবি এই বিশাল জনগোষ্টির দোর-গোড়া খুব কমই তার ছোঁয়া পৌঁছায়।
নরসুন্দর (নাপিত) সুকুমার শীল এমনই একজন। যে তার ইটপাতা ভ্রাম্যমান সেলুনে কাজ করে বংশানুক্রমিক এ পেশাকে টিকিয়ে রেখে যৎসামান্য উপার্জনে কোনরকমে জীবন ধারন করছে। কখনো আকাবাকা মেঠো পথের পাশে, কখনো হাটবাজারের এক কোনায়, হাটতে গিয়ে দূর থেকে চোখে পড়তো সত্তোর্ধ এক বৃদ্ধের কোলে মাথা লুকানো এক যুবক। দুজনেই পিঁড়িতে বসা। বৃদ্ধের হাতে কাঁচি-চিড়ুনী। মনে হয় গলাকাটার দৃশ্য। ইদানিংকালে গ্রামে গঞ্জে এই কাজ তেমন একটা দেখা যায় না। কাঁচি-চিড়ুনীর চিক-চাক শব্দের এক অপরুপ খেলা। একমনে নিবিঢ় ভালোবাসায় নিপুন হাতে মানুষের চুল-দাড়ি কেটে যাচ্ছেন বৃদ্ধ। যা আজকাল খুব একটা দেখা যায় না। সুকুমার শীলের সাথে আলাপকালে জানা যায়, তার লেখাপড়া পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত। পরিবারিক দুর অবস্থার কারনে অল্প বয়সেই জড়িয়ে পড়েন পৈত্রিক পেশায়। পাকিস্তান-বাংলাদেশের সৃস্টি আজ অব্দি এই জীবনে অনেক কিছুই দেখেছেন। সেই থেকে মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিই যেন তার দায়িত্ব হয়ে পরেছে। আটআনা মুজুরীতে প্রথম তার চুলকাটা শুরু। তবও ভালোই ছিল তার যৌবনের দিন গুলো। চার আনা, আট আনা করে যা মুজুরী পেতেন তাই ছিল অনেক। সারাদিন হাটবাজার, রাস্তার ধারে কাজ করতেন, হাট ভাঙতে রাত ১২টা ১টা বাজতো। কোমরে বাধা থাকতো চারকোনা লেজওয়ালা কাঁচা টাকার ব্যাগ। এক সময় খুচরা পয়সা জমে ভরে যেতো ব্যাগ। দুদিনের বাজার করেও জমা থাকতো পয়সা। সে সময় হাট শেষে বাজারের ভরা ব্যগ আর পয়সার ব্যাগ কোমরে বেঁধে গান গাইতে গাইতে বাড়ী ফেরার স্মৃতি আজও স্বপ্নের মতো।এখন ২০০/৩০০ টাকা আয়ে পকেট ভরে কিন্তু পেট ভরে না। নদী পাড়ের মানুষ হয়েও ইলিশ মৌসুমে বড় একটা ইলিশ কিনতে পারেননি বলে তার বড় আক্ষেপ। একটু পেট ভরে খাওয়ার আশায় গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের চুল-দাড়ি কাটেন তবুও এ স্বল্প উপার্জনের টাকায় উর্ধ্বমূখী মূ্ল্যের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী কেনার সামর্থ থাকে না। তাছাড়া মানুষও এখন সৌখিন। তারা আধুনিক সেলুনে চুলকাটায় বেশী আগ্রহী। এ ব্যাপারে সুকুমার শীল বলেন, ‘আয়না ওয়ালা সেলুনে দ্যাশ ভইরা গ্যাছে, তাই মানুষ আর ইটে বইয়া চুল কাটাতে চায় না। হের লাইগা আমাগো আয় রোজগার এখন কম অয়।’ সম্পত্তি বলতে পৈত্রিক ভিটা ছাড়া আর কিছু নেই তার। বউ ৩ ছেলে ১ মেয়ের কেউই এখন তার কাছে নেই। লেখাপড়া বেশী না করলেও তারা সবাই ঢাকা-বরিশাল গেছে জীবিকার সন্ধানে। পৈত্রিক পেশা সেলুনকে অবলম্বন করলেও ছেলেরা যৎসামান্য কিছু খরচ দেয় পিতার জন্য। আবার কখনো কখনো বৃদ্ধ বাবা মাকে দেখতে আসে কালে-ভদ্রে। নরসুন্দর সুকুমার শীল এ পর্যন্ত কোন বয়ষ্ক ভাতা বা কোন প্রকার সরকারী সাহায্য-সহযোগীতা পাননি। এ জন্য অবশ্য তার কোন আক্ষেপও নেই। তিনি বলেন, এই হাতে কত মাইনষের আউজ (শিশুকালে প্রথম চুলকাটা) কামাইছি। সেই ছোট্ট পোলাপান এহন কত্তো বড় অইছে, শিক্ষিত হইয়া বড় বড় চাকুরী করতাছে, দেখলে বুকটা ভইরা যায়। মনে অয় আমার কর্ম সার্থক।গ্রামের হিন্দু সমাজে সুকুমার শীলের মতো বংশানুক্রমিক নরসুন্দরদের বেশ কদর। ঘর শুদ্ধি, শ্রাদ্ধের জন্য তাদের নিয়মিত ডাক পরে। জীবনের শেষ কয়টা দিন তিনি মানুষের মাঝেই কাটাতে চান। যতদিন কর্মক্ষম থাকবেন এই পেশাতেই নিয়োজিত থাকবেন। প্রায় দুই তিন যুগ আগেও গ্রামের সকল হাটবাজারেই কম বেশী দেখা মিলতো ভ্রাম্যমান নরসুন্দরদের। হাটজারে আসা ক্রেতারা নিজেদের প্রয়োজনীয় পন্য কিনার ফাঁকে ফাঁকে চুল-দাড়ি কাটানোর কাজটাও সেরে নিতেন অল্প খরচে। এসকল সেলুনে আসন কেবল একটি ইট। ইটের উপর বিছানা বিছিয়ে নরসুন্দরগন নিপুন হাতে করতেন তার ক্ষৌরকর্ম। যেখানে আধুনিক সেলুনে চুল-দাড়ি কাটাতে জন প্রতি ৯০/১০০ টাকা লাগে সেখানে ভ্রাম্যমান সেলুনে ২৬/৩০ টাকা দিলেই চলে। এসব সেলুনে দৈনিক আয় হয় গড়ে ২০০/৩০০ টাকা। বর্তমান জীবনযাপনে এই আয় নিতান্তই অপ্রতুল। তারপরও গ্রামে গঞ্জের মানুষের সাথে গভীর সম্পর্কের টানে তারা নানা কস্টের মাঝেও এ পোশা বাদ দিতে পারেন না। কখনো বা ভাগ্য ভালো হলে কোন গ্রামের বাড়ী সদ্যজাত সন্তানের আকিকা অনুস্ঠানে গেলে সেদিন নরসুন্দরেরা ভালো বকশিস পায়। কিন্তু ইদানিং করোনা রোগের প্রাদুর্ভাবে সরকার ঘোষিত লকডাউন ও আধুনিক প্রযুক্তির দাপটে ক্রমেই উধাও হয়ে যাচ্ছে ভ্রাম্যমান সেলুন।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক ও সিইও: মামুনুর রশীদ নোমানী

ইমেইল: nomanibsl@gmail.com

মোবাইল: 01713799669 / 01712596354

 

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।

© বিডি ২৪ নিউজ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  টেইলার্সের কারখানা থেকে শ্রমিকের লাশ উদ্ধার   পটুয়াখালীতে র‍্যাবের গাড়ি ও বাসের সংঘর্ষে নিহত তিন   বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের হাজিপুর সেতুতে নির্ধারিত টোলের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়   মেহেন্দীগঞ্জে জেলেদের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ,নিখোঁজ জেলের লাশ উদ্ধার   বরিশাল বিভাগ প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছর পর বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্তে আনন্দে নগরবাসী   বরিশালের ৬টি আসনে হেভিওয়েটের ছড়াছড়ি, থাকছে বিদ্রোহীর শঙ্কা   বরগুনায় সমাজসেবা উপপরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ   বিএনপি নেতা লিটনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা   পটুয়াখালীতে ‎৩৫তম আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা   সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে ইলিশ শিকারের দায়ে ১১ জেলের কারাদণ্ড   ভোলা উপকূলে ‘মা’ ইলিশ রক্ষায় রেড অ্যালার্ট, জেলেদের ঋণের কিস্তি নেয়ায় নিষেধাজ্ঞা   বরিশালে ভুয়া জেলে কার্ডের ছড়াছড়ি,প্রকৃত জেলেরা দুর্দশায়   বরিশালে উচ্ছেদ হলো আদালতের ন্যায়কুঞ্জে গড়া হোটেল   আমতলীতে ১৬ শিক্ষক-কর্মচারীর মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ১৫   বরিশালে বিএনপি নেতাসহ দুই ভাইয়ের ধর্ষণে এক গৃহপরিচারিকা অন্ত:সত্ত্বা   ময়মনসিংহের তারাকান্দায় ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা   খুলনায় গুলি করে এক যুবককে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা   বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাত ধ্বংস করতে জাল নোট তৈরি, আ.লীগের নতুন পরিকল্পনা ফাঁস!   খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারায় সহিংসতার ঘটনায় তিন মামলা   টেকনাফ থেকে নারী-শিশুসহ ২১ জনকে জীবিত উদ্ধার
Translate »