রবিবার ২৬শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ১০ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   রবিবার ২৬শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


বদলি, অনিয়ম ও ঘুসের অভিযোগ: মাউশির কাজী আবু কাইয়ুমের দৌড়ঝাঁপ
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর, ২০২৫, ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

বদলি, অনিয়ম ও ঘুসের অভিযোগ: মাউশির কাজী আবু কাইয়ুমের দৌড়ঝাঁপ

বিডি ২৪ নিউজ অনলাইন: শিক্ষা প্রশাসনে আবারও আলোচনায় এসেছে মাউশির মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন বিভাগের পরিচালক কাজী আবু কাইয়ুম (শিশির)। ১৪তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা একাধিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বর্তমানে কঠিন সমালোচনার মুখে থাকলেও, তিনি পুনরায় মাউশির মহাপরিচালকের পদে আবেদন করেছেন। তার কর্মকাণ্ড, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই তদন্ত পরিচালনা করেছে। বিষয়টি শিক্ষা সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগজনক এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতার প্রশ্ন তোলেছে।

গত কয়েক বছরে মাউশি ও অন্যান্য শিক্ষা দপ্তরে অনিয়ম, তদবির এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মকর্তাদের দায়িত্বপ্রাপ্তি ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার প্রত্যাশা থাকলেও, নানা অভিযোগের কারণে এই প্রক্রিয়া প্রভাবিত হচ্ছে।

কাজী আবু কাইয়ুমের নাম প্রথম আলোচনায় আসে তখন, যখন তার বিরুদ্ধে নানা বেআইনি কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে। পটুয়াখালী সরকারি কলেজে কর্মরত অবস্থায় তিনি দীর্ঘ ৯০ দিন অনুপস্থিত ছিলেন। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩(খ) ও ৩(গ)-এর লঙ্ঘনের কারণে মন্ত্রণালয় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, “এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি অনুপস্থিতি এবং দপ্তরের দায়িত্ব এড়িয়ে চলার ঘটনা গুরুতর। এটি সরকারি কর্মচারীর শৃঙ্খলা এবং দায়িত্ব পালনের মানদণ্ডের পরিপন্থি।”

কাজী আবু কাইয়ুমের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো প্রধানত নিম্নরূপ:

বিধিবহির্ভূত ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড : শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালিয়েছে যে, তিনি দায়িত্ব ও ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।

জালিয়াতির মাধ্যমে এমপিওভুক্তি : অভিযোগ রয়েছে, তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে ছয়জন শিক্ষকের এমপিওভুক্তি নিশ্চিত করেছেন। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ে।

নিজের লেখা বই প্রকাশের নামে দুর্নীতি : প্রকাশনার নামে সরকারি অর্থের অপব্যবহার, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে মিথ্যাচার এবং চাঁদাবাজির অভিযোগও তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে।

অধিকার অতিক্রম ও অনুমতি ছাড়া তদন্ত : মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকের অনুমতি ছাড়া নিজ উদ্যোগে অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ এবং তদন্ত পরিচালনার ঘটনা ঘটিয়েছেন। এটি অভিযোগ প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনা ২০১৫ (সংশোধিত ২০১৮)-এর পরিপন্থি।

কোটি টাকা ঘুসের প্রস্তাব : এনসিটিবির চেয়ারম্যান পদ লাভের জন্য কোটি টাকা ঘুস প্রস্তাবের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার কর্মকাণ্ডের তদন্তের পর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

ডিআইএ-র পরিচালক পদ থেকে বদলি : ২২ নভেম্বর ২০২৪-এ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক পদ থেকে তাকে বদলি করা হয়।

ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজে বদলি : এর পর তাকে ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজে দায়িত্বে নেওয়া হয়।

মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানায়, “বদলির মাধ্যমে দপ্তরে স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়।” অভিযোগের বিষয়ে কাজী আবু কাইয়ুম বলেন, “আমার দপ্তরে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফাইল আসে না। তাই অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই। আমার বিরুদ্ধে মাউশির মাধ্যমিকের পরিচালক ও সাবেক ডিজি ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। এনসিটিবির চেয়ারম্যান পদে কোটি টাকা ঘুসের প্রস্তাব দেওয়ার বিষয় সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে একজন বঞ্চিত কর্মকর্তা।”
তার এই প্রতিক্রিয়া অনেক সমালোচকদের মতে, অভিযোগ অস্বীকারের সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় মহাপরিচালকের পদে আবেদন তার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবের দিকটিও স্পষ্ট করে।

কাজী আবু কাইয়ুম পুনরায় মাউশির ডিজি পদে আবেদন করেছেন। এটি একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে শিক্ষা প্রশাসনের জন্য।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, “অভিযোগ ও তদন্তের মুখোমুখি থাকা একজন কর্মকর্তার পুনরায় উচ্চপদে প্রার্থী হওয়া প্রশাসনিক স্বচ্ছতার জন্য উদ্বেগের বিষয়।” রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, “পুনরায় আবেদন তার প্রভাব ও তদবিরের শক্তি প্রদর্শন করে। এটি প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও দায়িত্ববোধের প্রশ্ন তুলছে।”
বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির মতো দপ্তরে নানা সময় কর্মকর্তাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠে।
এর ফলে:
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দায়িত্বের স্বচ্ছতা হ্রাস পায়।শিক্ষকদের নিয়মিত সুবিধা বা এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে অনিয়মের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, নোটিশ ও কারণ দর্শানোর প্রক্রিয়া চালানো হয়। তবে ক্ষমতার অপব্যবহার ও তদবিরের কারণে কখনো কখনো প্রক্রিয়াগুলো কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে না।
কাজী আবু কাইয়ুম তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। তার মতে, “দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল না আসায় অনিয়মের সুযোগ নেই।” বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি প্রতিরক্ষা এবং রাজনৈতিক চাপের একটি কৌশল, যা দীর্ঘমেয়াদি প্রশাসনিক সংস্কৃতি ও স্বচ্ছতার জন্য উদ্বেগের কারণ। এমপিওভুক্তি, বদলি ও চাকরির স্থিতিশীলতা বিষয়ে অনিয়ম শিক্ষকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করে। বিতর্কিত কর্মকর্তার পুনরায় উচ্চপদে প্রার্থী হওয়া প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতি সন্দেহ তৈরি করে।
“কাজী আবু কাইয়ুমের পুনরায় আবেদন শিক্ষা প্রশাসনের স্বচ্ছতার পরীক্ষার মতো। এটি শুধুমাত্র একজন কর্মকর্তার বিষয় নয়, বরং পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার দায়বদ্ধতার পরীক্ষা।” সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, অভিযোগ ও তদন্তের মধ্যেই উচ্চপদে আবেদন করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের সংস্কৃতি আরও জোরালো হতে পারে।

কাজী আবু কাইয়ুমের মামলা এবং পুনরায় মহাপরিচালকের পদে আবেদন শিক্ষা প্রশাসনের জন্য একটি জটিল প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে।
তার বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূত, বেআইনি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনিক পদক্ষেপ হিসেবে তাকে বদলি ও কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া ও পুনরায় উচ্চপদে আবেদন শিক্ষা প্রশাসনের স্বচ্ছতার প্রশ্ন তোলেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে, স্বচ্ছতা বজায় রেখে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা। কাজী আবু কাইয়ুমের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও পুনরায় মহাপরিচালকের পদে আবেদন শিক্ষা সম্প্রদায়ের নজর কাড়ছে। এই ঘটনা শিক্ষা প্রশাসনের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার গুরুত্বের উপর নতুন আলো ফেলে।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক ও সিইও: মামুনুর রশীদ নোমানী

ইমেইল: nomanibsl@gmail.com

মোবাইল: 01713799669 / 01712596354

 

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।

© বিডি ২৪ নিউজ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  বরগুনার কৃষি কর্মকর্তার অফিসই বাসা!   বরিশালে ভাই-ভাই দ্বন্দ্বে বড়ভাইকে মারধর   বাগেরহাটে বিএনপি নেতা ওয়াহিদুজ্জামান দিপুর নেতিবাচক কর্মকাণ্ড   অর্থ কেলেঙ্কারীতে আটক হওয়া সাইদুর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে   বাসের ধাক্কায় বিএনপি নেতা নাসিম আকন নিহত   বানারীপাড়ায় তিন বিএনপি নেতার নামে চাদাঁবাজী মামলা   গণপূর্তের কমিশন কিং প্রকৌশলী শাহ আলম ফারুক   ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে পি এস মাহসুদ চলবে প্রতি শুক্রবার   চট্টগ্রামের মাফিয়া ডন পাপ্পীর যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ভিসা বাতিলের আবেদন   পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংঘাতের মাঝে থাকা ডুরান্ড লাইন,দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে বিতর্ক   বিতর্কিত প্রকৌশলী ইকবাল কবিরের দুর্নীতি অনুসন্ধান করবে দুদক   কালচারাল অফিসার অসিত বরন পালিয়ে গেল গভীর রাতে   বরিশালের এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল’র সঙ্গে বন্ধু ফুলকাম বাদশার স্ত্রীর পরকীয়ার অভিযোগ   মা ইলিশ বাঁচাতে জলকামান ব‌্যবহার   সুনামগঞ্জের ছাতকে সোনাই নদীর বালু লুটে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট   বরগুনার তালতলীতে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ সাবেক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে   পালিয়ে যেতে পারে বরিশাল শিল্পকলার অসিত বরন দাশ   আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের   জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে:সিইসি   বরিশাল শিল্পকলার সেই বিতর্কিত অসিতকে এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে বদলি
Translate »