অন্যদিকে ঝুলে থাকা পরিক্ষার আশু কোন সমাধান না দেখায় চাকুরির আবেদন নিয়ে শঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। ফলে সেশন জটের ঝুঁকিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন।
এমতাবস্থায় প্রশাসনের নিকট অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমের অগ্রগতি নিশ্চিত এবং আটকে থাকা পরিক্ষার দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তুলে বলেন, করোনা মহামারীর ফলে আমাদের চলমান পরিক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের কারো একটা/দুটো পরিক্ষা আর বাকি। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি দীর্ঘায়িত হওয়ার দরূণ সেটা আর হচ্ছে না। কেউ দীর্ঘ ২১ মাস ধরে একই বর্ষে অবস্থান করছে। এদিকে কিছুদিনের মধ্যেই বিভিন্ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন, ব্যাংক জব, জুডিসিয়ালসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি চাকুরির সার্কুলার ছাড়বে। কিন্তু এই দুই/একটা পরিক্ষা না হওয়ায় আমরা সেখানে আবেদন করতে পারব না। অথচ গত ৭ সেপ্টেম্বর মৌখিক পরীক্ষা অনলাইনে শেষ করার ঘোষণা দিয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু ঘোষণা দিলেও কিছুই বাস্তবায়ন করছে না কর্তৃপক্ষ। আটকে থাকা পরীক্ষা নিয়েও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি তাঁরা।
দ্রুত আটকে থাকা পরিক্ষা সম্পন্ন করার দাবি জানিয়ে ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মিরাজ শেখ অনিক বলেন, করোনার কারণে আমাদের চলমান পরিক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের আর শুধু মাত্র প্রেক্টিক্যাল পরিক্ষা বাকি আছে। সেগুলো স্বাস্থ্য বিধি মেনে চাইলে নিতে পারেন প্রশাসন।ফলে আমরা আসন্ন বিভিন্ন চাকুরির আবেদন গুলো করতে পারি। তাই আমাদের পরীক্ষা দ্রুত নেয়ার দাবি জানাই।
একই দাবি করে গনিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এম এইচ আর হাবীব খান জানান, আমাদের আর একটা মাত্র পরিক্ষা হলেই শেষ। পরিক্ষার বিষয়ে একাধিকবার বললেও কোন কার্যকরী সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছেনা সংশ্লিষ্টরা। এটা মূলত তাদের একাগ্রতার অভাবের ফল। তাই দ্রুত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হক।
সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের একই বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ আলম বলেন, আমাদের দুই ক্রেডিটের একটা পরিক্ষা বাকি। সেটা কবে হবে? সে বিষয়ে কোন কিছুই জানা যাচ্ছে না। এদিকে একটা পরিক্ষার জন্য আসন্ন চাকুরির পরিক্ষা হতে বিচ্ছিন্ন হতে চলেছি আমরা। ফলে বাড়ছে পরিবারের দুর্ভোগ। তাই এবিষয়ে দ্রুত একটা সমাধান চাই।
জানতে চাইলে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুন নাঈম মিতু বলেন, ‘আমাদের আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো যদি হয়ে যেত তাহলে আমাদের জন্য অনেক উপকার হতো। আইনের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের বিশেষ লক্ষ্য জুডিসিয়াল পরীক্ষা।যেখানে আগের পরীক্ষার ভাইবা কিছুদিনের মধ্যে শেষ হয়ে আবার নতুন সার্কুলার দিবে। কিন্তু আমরা এই সুযোগগুলো থেকে বঞ্চিত হতে চলেছি।অথচ একই ক্লাসে আমরা ১৯ মাস ধরে অবস্থান করছি।
অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে অভিযোগ তুলে বলেন, করোনা পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের ঘরবন্দী করেছে ঠিকই কিন্তু অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তি দিয়েছে সর্বত্র বিচরণের সুযোগ। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি। শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও বিশ্বিবদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অগ্রসর রাখার ঘোষণা আসলেও নেই আমাদের কোন অগ্রগতি। অনলাইন ক্লাসের আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বিভাগের অনেক শিক্ষকই। যদিও হচ্ছে তথাপি সকল বিষয়ে হচ্ছে না ক্লাস! সপ্তাহে যে দুই এক দিন ক্লাস হয় সেটাও অনেক শিক্ষককে বলে বলে করাতে হয়! সেটা আবার সকল বর্ষে নয়! বিভিন্ন বিভাগে অনেক বর্ষের কোন ক্লাস শুরুই হয় নি আজ অব্দি। অনেকে সেমিস্টার/বর্ষের পরিক্ষা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তারও কোন সমাধান দেখছি না আমরা।
নিয়মিত অনলাইন ক্লাস নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা প্রায় ২২ মাস ধরে প্রথম বর্ষের ১ম সেমিস্টারেই আছি। আমাদের অনলাইনেও কোন কার্যক্রম চলছে না। ক্লাসের ব্যাপারে শিক্ষকদের বলেও কোন কাজ হয় না। অথচ একই ক্লাসে ২০১৯-২০ এবং এবার ভর্তি পরীক্ষা হলে ২০-২১ সেশন মিলে তিনটি বর্ষের শিক্ষার্থী হবে! তখন সবার জন্যই ক্লাস ও পরিক্ষা কষ্ট সাধ্য ব্যপার হয়ে দাঁড়াবে।
তাই আমাদের দাবি প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার অটোপাস দেয়া হোক এবং দ্বিতীয় বর্ষের অনলাইন ক্লাস শুরু হোক। যাতে ক্যাম্পাস খোলা মাত্র আমরা পরীক্ষা দিতে পারি।
এ বিষয়ে দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদেন এখন পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস শুরু হয় নি। এবিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা পরবর্তীতে জানানো হবে বলে আশ্বস্ত করে আসছেন। কিন্তু অন্যন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছে। তাই দ্রুত অনলাইন ক্লাস নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীর একই কথা জানিয়ে বলেন, সপ্তাহে একটা দুটো ক্লাস হয়। আবার কখনো হয় না। ক্লাস হলেও কোর্সের সকল বিষয়ে ক্লাস হচ্ছে না। এই সমস্যার সমাধান কিভাবে হবে?
বিভাগের শিক্ষকদের ইচ্ছা ও একাগ্রতার অভাব এবং প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারে অভ্যস্থ না হওয়া। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতর অভাব এবং করোনায় তাদের মানসিক ও আর্থিক সমস্যার কারণে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম তেমন ফলপ্রূস হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অধ্যাপক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন ভোগান্তির শিকার না হয় সেটা আমরা অবশ্যই চাই। অনলাইন ক্লাসের বিষয়টা নিজ নিজ বিভাগের ব্যাপার। এটা সল্প পরিসরে হলেও চালু রাখা দরকার। করোনার এই ক্রান্তিলগ্নেও তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কিভাবে পরিক্ষাগুলো নেয়া যায় সেবিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। আগামী ২৭ তারিখ একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভা রয়েছে সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা হবার কথা রয়েছে। আশা করছি তারপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিদ্বান্ত গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষার্থীদের আটকে থাকা পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এম এ বারী বলেন,দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই মুহুর্তে পরীক্ষা নেয়া অনেক ঝুকিপূর্ণ। তাছাড়া সরকারী কোন ঘোষণা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একক কোন উদ্যোগে পরিক্ষা নেয়া সম্ভব নয়। যেসব শিক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে সীমিত পরিসরে তাদের মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা শিক্ষার্থীদের এই দাবিতে সহমত পোষণ করে বলেন,আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই তারা পরীক্ষা শেষ করে বিভিন্ন কর্মস্থলে যোগ দিক। ফলে অনেক পরিবারে একটা সুরাহা হবে।কিন্তু একথাও সত্য যে বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেই একক ভাবে সিদ্ধন্ত নিতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) যদি নির্দেশনা দেয় তাহলে সে অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নেব। এছাড়াও আসন্ন একাডেমিক সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানান তিনি।